হেফাজতকে নিষিদ্ধের দাবি ৫৫১ আলেমের
হেফাজতকে নিষিদ্ধ করা ও নৈতিক পদস্থলনসহ জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে যুক্তদের যথাযথ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বাংলাদেশের ৫৫১ আলেম। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান তারা।
হেফাজতকে নিষিদ্ধ করা ও নৈতিক পদস্থলনসহ জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে যুক্তদের যথাযথ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বাংলাদেশের ৫৫১ আলেম। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান তারা।
এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, ইসলামে নারী-পুরুষে বন্ধনের বৈধ পন্থা হল বিয়ে। আল্লাহ বিয়েকে হালাল করেছেন, বিপরীতে যিনা ব্যাভিচারসহ বিবাহ-বহির্ভূত সব অবৈধ মেলামেশাকে নিষিদ্ধ করেছেন। চার মাযহাবের ইমামগণসহ সমস্ত আইম্মায়ে কিরামের ঐক্যমত হল, নিকাহের বিপরীতে চুক্তিভিত্তিক সাময়িক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা সম্পূর্ণ হারাম ও ইসলামের দৃষ্টিতে শাস্তিমূলক অপরাধ।
আহলে সুন্নাতের শীর্ষ আলেমগণ বলেন, বর্তমানে ইসলাম রক্ষার কথা বলে হেফাজতের কিছু চিহ্নিত দায়িত্বশীল নেতা হাজার বছর ধরে প্রচলিত ইসলামের মৌলিক বিধানের ওপর হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। শরয়ী শাশ্বত বিধান পাল্টে দিয়ে চুক্তিভিত্তিক সাময়িক বিয়ের প্রবর্তন করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে, যা সমাজে অবাধ অনাচার, যৌনাচার ও যুব সমাজকে বিকৃত পথে চলতে উৎসাহ দেবে। ইসলাম সম্পর্কে ভুল বার্তা পৌঁছাবে।
অন্যদিকে ইসলামী সামাজিক রীতিনীতি ও পরিবার প্রথা ভেঙে দিয়ে সামাজিক অশান্তি সৃষ্টির পথ দেখাবে। আহলে সুন্নাত নেতৃবৃন্দ বলেন, হেফাজতের তথাকথিত দায়িত্বশীল মূলত নিজের কৃত জঘন্য অপরাধ ঢাকতেই ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কখনো মানবিক বিয়ে বা কখনো চুক্তিভিত্তিক বিয়ের কথা বলে নিজেকে রক্ষা করতে চাইলেও সবকিছু বিবেচনা ও পর্যবেক্ষণ করে শরয়ী ফয়সালা হল, ইসলামে চুক্তিভিত্তিক বিয়ে হারাম। তাই যে বা যারা এ ধরনের কর্মকান্ডে জড়িত থাকবে, বিবাহিত হলে প্রমাণ সাপেক্ষে তাদেরকে পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার বিষয়ে ইসলামে ফয়সালা দেয়া হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, এভাবে ইসলামের নামে সামাজিক অনাচারে যুক্ত হওয়াসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করা, জানমালের ক্ষতিসাধন করাও ইসলাম সমর্থন করে না। এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে জড়িত ব্যক্তি বা সংগঠনের কাছে দেশ-মিল্লাত-মাযহাব কখনো নিরাপদ নয়। ২০১০ সালে হেফাজতের জন্মের পর হতেই তারা সহিংসতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। কখনো ইসলাম প্রচারক আল্লাহর ওলিদের মাজার খানকাহ শরীফ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়ার হুমকি, আবার কখনো দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সুফিবাদি জনতাকে প্রকাশ্যে হামলার হুমকি দিয়ে তারা এদেশে উগ্র জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাদের সাথে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের দূরতম সম্পর্কও নেই। ইসলাম হেফাজতের নামে উগ্র হেফাজতিদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের উচ্চ বিলাস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে গোটা আলেম সমাজ আজ লজ্জিত হয়েছে।
আহলে সুন্নাত নেতৃবৃন্দ দেশবাসীকে আলেম লেবাসধারী এ জঙ্গীগোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহবান জানানোসহ দেশে প্রচলিত শিক্ষা আইন বা নীতিমালাবিরোধী কওমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-বোর্ডগুলোর ওপর পরিপূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও হেফাজতকে উগ্র জঙ্গি সংগঠন আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাআত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান শাইখুল হাদীছ আল্লামা কাজী মুহাম্মদ মুঈনুদ্দীন আশরাফী ও মহাসচিব আল্লামা সৈয়দ মছিহুদ্দৌলাহ স্বাক্ষরিত যুক্ত বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি সৈয়দ অছিয়র রহমান, শাইখুল হাদীছ আল্লামা সোলাইমান আনসারী, অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি আব্দুল বারী জিহাদি, আল্লামা এমএ মান্নান, অধ্যক্ষ আল্লামা নুরুল আলম হেজাজী, আল্লামা মুফতি কাজী আব্দুল ওয়াজেদ, আল্লামা এমএ মতিন, অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি কাজী হারুনুর রশীদ, শাইখুল হাদীছ আল্লামা আশরাফুজ্জমান কাদেরি, অধ্যক্ষ আল্লামা স উ ম আবদুস সামাদ, অধ্যক্ষ আল্লামা মুখতার আহমদ, শাইখুল হাদীছ ড. আফজাল হোসাইন, অধ্যক্ষ আল্লামা আব্দুল আলিম রেজভী, অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান, অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি আহমদ হোসাইন কাদেরী, উপাধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি আবুল কাশেম ফজলুল হক, উপাধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি ড. লিয়াকত আলী, মাও. ছাদেকুর রহমান হাশেমী, উপাধ্যক্ষ মুফতি জুলফিকার আলী চৌধুরী, অধ্যক্ষ মুফতি আবু বকর ছিদ্দিকী, অধ্যক্ষ মুফতি আব্দুল মতিন, অধ্যক্ষ মুফতি খোরশিদ আলম, অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম কাদেরী, অধ্যক্ষ মুফতি ইসমাইল নোমানী, মুফতি গোলাম মুস্তফা, উপাধ্যক্ষ মুফতি আব্দুল আজিজ আনোয়ারী, মুফতি আলী আকবর রেজভি, অধ্যক্ষ মহিউদ্দীন হাশেমী, অধ্যক্ষ বদিউল আলম রেজভি, অধ্যক্ষ শোয়াইব রেজা, অধ্যক্ষ মুফতি খলিলুর রহমান নিজামী, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইদ্রিস, অধ্যক্ষ মুশতাক আহমদ, মুফাসসির ছালেকুর রহমান কাদেরী, অধ্যক্ষ আবুল কালাম আমিরী, উপাধ্যক্ষ ড. খলিলুর রহমান, মাও. আবুল আসাদ মুহাম্মদ জুবাইর রজভি, মাও. শাহ নুর মুহাম্মদ আল কাদেরী, মুহাদ্দিস জসিম উদ্দীন আজাহারি, মুফতি মুহাম্মদ উল্লাহ, অধ্যক্ষ মুফতি আব্দুল আওয়াল, মাও. আলাউদ্দিন আল কাদেরী, মুফতি গোলাম মুস্তফা মুহাম্মদ নুরুন্নবী, মুফতি হাফেজ মুহাম্মদ আনিসুজ্জামান, অধ্যক্ষ জালাল উদ্দীন কাদেরি, মুফতি মাহমুদুল হাসান, অধ্যক্ষ জামেউল আখতার আশরাফী, উপাধ্যক্ষ মুফতি জসিম উদ্দীন কাদেরী, ড. মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন, অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসাইন, অধ্যাপক জালাল উদ্দীন আজহারী, ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালিম, ড. মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন, ড. মুহাম্মদ সাইফুল আলম, ড. মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান, মাও. শাহজালাল আহমদ আখঞ্জি, মাও. সোলাইমান খান রব্বানী, মুফতি বদিউজ্জমান হামদানী, মুহাদ্দিস মুনিরুজ্জমান কাদেরী, অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান, অধ্যক্ষ হাফেজ আহমদ আল কাদেরী, উপাধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দীন কাদেরী, অধ্যক্ষ মুফতি আলাউদ্দিন, মুফাসসির ইউনুছ রেজভি, মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মদ ওমাইর রজভি, মাও. সেকান্দর হোসাইন আল কাদেরী, মুফতি আহমদুল্লাহ ফোরকান খান কাদেরী, অধ্যক্ষ শাহাদাৎ হোসাইন, মুফতি ইকবাল হোসাইন কাদেরীসহ আহলে সুন্নাতের দায়িত্বশীল দেশের ৫৫১ জন শীর্ষ আলেমেদ্বীন।
প্রকৌশল নিউজ/এমএস