২০২০ সালে এসএমই খাতে ৭৬ শতাংশ উৎপাদিত পণ্য অবিক্রিত

কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র এবং মাঝারী (সিএমএসএমই) খাতের উদ্যোক্তাদের বিকাশে আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতকরণে ঋণ প্রদানের কাঠামোগত সংষ্কার ও বিশেষায়িত ব্যাংক স্থাপন, এসএসই ডাটাবেইজ প্রণয়ন, সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও তার যথাযথ বাস্তাবায়ন এবং সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের প্রদত্ত ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোন কে টার্ম লোন হিসেবে গণ্য করা প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

২০২০ সালে এসএমই খাতে ৭৬ শতাংশ উৎপাদিত পণ্য অবিক্রিত

কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র এবং মাঝারী (সিএমএসএমই) খাতের উদ্যোক্তাদের বিকাশে আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতকরণে ঋণ প্রদানের কাঠামোগত সংষ্কার ও বিশেষায়িত ব্যাংক স্থাপন, এসএসই ডাটাবেইজ প্রণয়ন, সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও তার যথাযথ বাস্তাবায়ন এবং সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের প্রদত্ত ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোন কে টার্ম লোন হিসেবে গণ্য করা প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

মঙ্গলবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং এসএমই ফাউন্ডেশন-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এসএমই প্রণোদনা প্যাকেজ হতে ঋণ প্রাপ্তির পদ্ধতি শীর্ষক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভার তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান যথাক্রমে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উক্ত মতিবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। 

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, শিল্পখাতে ৮০ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি ম্যানুফ্যাকচারিং এ ৪৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন করে সিএমএসএমই খাত। তবে প্রয়োজনীয় আর্থিক এবং নীতিগত সহায়তার অভাবে সিএমএসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সম্ভাবনা ও কর্মদক্ষতার পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না। তিনি বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় দেশে দীর্ঘমেয়াদে ছুটি এবং লকডাউনের ফলে সিএমএসএমই খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। স্থানীয় এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে এসএমই খাতে সামগ্রিকভাবে আয় হ্রাস হয়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ এবং প্রায় ৭৬ শতাংশ উৎপাদিত পণ্য অবিক্রিত থেকে গেছে। 

ডিসিসিআই সভাপতি উল্লেখ করেন, ব্যবসায়ীক দক্ষতা, পণ্যের বহুমুখীকরণ, দক্ষ কর্মী ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, বাজারে প্রবেশাধিকার, ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তি, প্রযুক্তিগত দূর্বলতা, গুণগতমানের কাঁচামাল সরবরাহ এবং উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তার অভাব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণপাওয়াসহ অন্যান্য নীতিগত সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প উদ্যোক্তাদের থেকে পিছিয়ে রয়েছেন। তিনি জানান, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন, জামানতের অভাব এবং প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ প্রদানে ব্যাংকের অনাগ্রহ ঋণ বিতরণে ধীর গতি এ কার্যক্রমকে আরও দীর্ঘায়িত করছে। এর জন্য প্রয়োজন সংষ্কার।  

প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রথম থেকেই এসএমই কাজ করছে। সেইসঙ্গে এ খাতের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় আইনি সংষ্কার বাস্তবায়নে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর উপর জোরারোপ করেন। তিনি জানান, ব্যবসায়ীক সাফল্যের পাশাপাশি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য এখাতের উদ্যোক্তাদের অবশ্যই দেশের বিদ্যমান আইনি ও আর্থিক কাঠামোর সম্পর্কেসম্যক ধারণা গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। দেশের উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতকরণে ঋণ প্রদানের কাঠামোগত সংষ্কার একান্ত আবশ্যক বলে, তিনি মত প্রকাশ করেন। এছাড়াও এলডিসি পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, দেশে ব্যবসা পরিচালন সূচকে উন্নয়ন ও বিনিয়োগ আকর্ষনে বিদ্যমান কর এবং শুল্ক কাঠামোর পরিবর্তনের আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ সহায়তা প্রদানকার্যক্রমে সফলতা অর্জনে প্রয়োজনীয় সংষ্কার ও সংস্থা সমূহের দক্ষতা বাড়ানো একান্ত অপরিহার্য।

এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান বলেন, মাত্র দেড় মাসেই শুধুমাত্র এসএমই উদ্যোক্তাদের মাঝে ১২২ কোটি বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে। এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সরাসরি ঋণ প্রদান করা সম্ভব হলে, এখাতের উদ্যোক্তাদের আরও কার্যকর ভাবে ঋণ সহায়তা প্রদান সম্ভপর হতো। এখাতের উদ্যোক্তাদের সহায়তা নিশ্চিতকরণে তিনি দেশে একটি বিশেষায়িত এসএমই ব্যাংক স্থাপনের প্রস্তাব করেন। তিনি জানান, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকার হতে এসএমই ফাউন্ডেশনকে প্রদত্ত ২০০ কোটি টাকা এখাতের উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করা হবে। মফিজুর রহমান বলেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ ফেরতের হার অত্যন্ত সন্তোষজনক এবং বরাদ্দকৃত অর্থের ৫০ভাগ নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণের আহ্বান জানান।