ক্যান্ডি টেস্ট : ৩১২ রানে এগিয়ে টাইগাররা
নাজমুল হোসেন শান্তর ১৬৩ ও অধিনায়ক মোমিনুল হকের ১২৭ রানের সুবাদে শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে ৭ উইকেটে ৫৪১ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষনা করে সফরকারী বাংলাদেশ।
নাজমুল হোসেন শান্তর ১৬৩ ও অধিনায়ক মোমিনুল হকের ১২৭ রানের সুবাদে শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে ৭ উইকেটে ৫৪১ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষনা করে সফরকারী বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ইনিংস শেষে নিজেদের ইনিংস শুরু করে তৃতীয় দিন শেষে ৭৩ ওভারে ৩ উইকেটে ২২৯ রান করেছে স্বাগতিক শ্রীলংকা। ফলো-অন এড়াতে আরও ১১২ রান করতে হবে লংকানদের। আর সব মিলিয়ে এখনো ৩১২ রানে পিছিয়ে তারা।
ক্যান্ডির পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ৪ উইকেটে ৪৭৪ রান করেছিলো বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্তর ১৬৩ ও অধিনায়ক মোমিনুল হকের ১২৭ রানের সুবাদে রানের পাহাড় গড়ার সুযোগ পায় টাইগাররা। শান্ত-মোমিনুলের আউটের পর দলকে বড় স্কোরের পথে নিয়ে যান মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। দিন শেষে মুশফিক ৪৩ ও লিটন ২৫ রানে অপরাজিত ছিলেন।
তৃতীয় দিন প্রথম সেশনেই হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মুশফিক-লিটন। ২৩তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নিজের ইনিংস বড় করার চেষ্টায় ছিলেন মুশফিক। তবে টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম হাফ-সেঞ্চুরি তুলেই আউট হন লিটন। ৬৭ বলে ৫টি চার ও ১টি ছক্কা মেরে ৫০ রানে থামেন তিনি। পঞ্চম উইকেটে ১৪৬ বলে ৮৭ রান যোগ করেন মুশফিক-লিটন।
লিটনের বিদায়ের পর দ্রুত আরও ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মেহেদি হাসান মিরাজ ৩ ও তাইজুল ইসলাম ২ রান করে ফিরেন। অষ্টম উইকেটে তাসকিন আহমেদকে নিয়ে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেছিলেন মুশফিক। জুটিতে ১৫ বলে ১৭ রানও উঠে যায়। তবে ১৭৩তম ওভার শেষে বাংলাদেশের ইনিংস ঘোষনা করেন দলের অধিনায়ক মোমিনুল হক। ঐসময় বাংলাদেশের রান ৭ উইকেটে ৫৪১।
টেস্ট ক্রিকেটে শ্রীলংকার বিপক্ষে ইনিংসে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। আর সব মিলিয়ে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ দলীয় রান বাংলাদেশের। এ ছাড়া ১৭৩ ওভার ব্যাট করায় নিজেদের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম ইনিংস। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দীর্ঘতম ইনিংস ১৯৬ ওভারের। ২০১৩ সালে গল টেস্টে শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৯৬ ওভার ব্যাট করে ৬৩৮ রান করেছিলো বাংলাদেশ। এটি এখনো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ও দীর্ঘতম ইনিংস।
১৫৬ বল খেলে ৬টি চারে অপরাজিত ৬৮ রান করেন মুশফিক। ৬ রানে অপরাজিত ছিলেন তাসকিন। শ্রীলংকার বাঁ-হাতি পেসার বিশ্ব ফার্নান্দো ৯৬ রানে ৪টি উইকেট নেন।
তৃতীয় দিনের মধ্যাহ্ন-বিরতির আগ মূর্হুতে নিজেদের ইনিংস শুরু করে শ্রীলংকা। ব্যাট হাতে দলকে দারুন সূচনা এনে দেন শ্রীলংকার দুই ওপেনার অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে ও লাহিরু থিরিমান্নে। তবে সর্তকতার সাথে খেলতে থাকেন তারা। সর্তক হওয়ায় দলের রান তোলার গতিও কম ছিলো। তবে উইকেট বাঁচিয়ে খেলায় মনোযোগি ছিলেন করুনারত্নে ও থিরিমান্নে।
করুনারত্নে ও থিরিমান্নের ব্যাটিং দৃঢ়তায় শতভাগ সাফল্য নিয়ে দ্বিতীয় সেশন শেষ করার পথে ছিলো শ্রীলংকা। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনের শেষ বলে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন বাংলাদেশের স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম হাফ-সেঞ্চুরি তোলা থিরিমান্নেকে লেগ বিফোর করেন মিরাজ। ১২৫ বলে ৮টি চারে ৫৮ রান করেন থিরিমান্নে। এতে ১ উইকেটে ১১৪ রান নিয়ে বিরতিতে যায় শ্রীলংকা।
দিনের শেষ সেশনে শ্রীলংকাকে চেপে ধরার চেষ্টা করেছিলো বাংলাদেশের বোলাররা। ওশাদা ফার্নান্দোকে ২০ রানে থামান পেসার তাসকিন আহমেদ ও সাবেক অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজকে ২৫ রানে শিকার করেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম।
দলীয় ১৯০ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের পর ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে দিনের খেলা শেষ করেন করুনারত্নে। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৬তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৮৫ রানে অপরাজিত করুনারত্নে। ২৬ রানে ক্রিজে আছেন ধনাঞ্জয়া। বাংলাদেশের তাসকিন-মিরাজ-তাইজুল ১টি করে উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড (টস-বাংলাদেশ)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস (আগের দিন ৪৭৪/৪, ১৫৫ ওভার, মুশফিক ৪৩*, লিটন ২৫*) :
তামিম ইকবাল ক থিরিমান্নে ব ফার্নান্দো ৯০
সাইফ হাসান এলবিডব্লু ব ফার্নান্দো ০
নাজমুল হোসেন শান্ত ক এন্ড ব কুমারা ১৬৩
মোমিনুল হক ক থিরিমান্নে ব ডি সিলভা ১২৭
মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ৬৮
লিটন দাস ক ওশাদা ফার্নান্দো ব ফার্নান্দো ৫০
মেহেদি হাসান মিরাজ ক ডিকবেলা ব লাকমল ৩
তাইজুল ইসলাম ক ডিকবেলা ব ফার্নান্দো ২
তাসকিন আহমেদ অপরাজিত ৬
অতিরিক্ত (বা-৯, লে বা-৬, নো-৬, ও-১১) ৩২
মোট (১৭৩ ওভার, ৭ উইকেট) ৫৪১
উইকেট পতন : ১/৮ (সাইফ), ২/১৫২ (তামিম), ৩/৩৯৪ (শান্ত), ৪/৪২৪ (মোমিনুল), ৫/৫১১ (লিটন), ৬/৫১৫ (মিরাজ), ৭/৫২৪ (তাইজুল)।
শ্রীলংকা বোলিং :
সুরাঙ্গা লাকমল : ৩৬-১৪-৮১-১ (নো-৩),
বিশ্ব ফার্নান্দো : ৩৫-৯-৯৬-৪ (ও-১, নো-১),
লাহিরু কুমারা : ২৮-৪-৮৮-১ (ও-৪),
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ : ৭-১-১৪-০,
ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা : ৩০-১-১৩০-১ (নো-২),
হাসারাঙ্গা ডি সিলভা : ৩৬-২-১১১-০,
দিমুথ করুনারত্নে : ১-০-৬-০।
শ্রীলংকা প্রথম ইনিংস :
করুনারত্নে অপরাজিত ৮৫
লাহিরু থিরিমান্নে এলবিডব্লু ব মিরাজ ৫৮
ওশাদা ফার্নান্দো ক লিটন ব তাসকিন ২০
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ বোল্ড ব তাইজুল ২৫
ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা অপরাজিত ২৬
অতিরিক্ত (বা-৪, লে বা-৫, নো-৩, ও-৩) ১৫
মোট (৭৩ ওভার, ৩ উইকেট) ২২৯
উইকেট পতন : ১/১১৪ (থিরিমান্নে), ২/১৫৭ (ফার্নান্দো), ৩/১৯০ (ম্যাথুজ)।
বাংলাদেশ বোলিং :
আবু জায়েদ : ৮-১-২৫-০ (নো-১),
তাসকিন আহমেদ : ১২-৩-৩৫-১,
এবাদত হোসেন : ১০-১-৪৪-০ (ও-৩, নো-২),
মেহেদি হাসান মিরাজ : ২৪-৬-৬০-১,
তাইজুল ইসলাম : ২০-৫-৫৬-১।
প্রকৌশল নিউজ/এমএস