মানবপাচার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত

চার বছর পর ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মানবপাচার সূচকে (ট্রাফিকিং ইন পারসন) রিপোর্টে একধাপ উন্নতি করে বাংলাদেশ। এই বছরও একই অবস্থানে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১ জুলাই প্রকাশিত ট্রাফিকিং ইন পারসন-২০২১ রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থান টায়ার-টু-তে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট মানবপাচার রোধে ১৬টি অগ্রাধিকার ভিত্তিক সুপারিশ করেছে।

মানবপাচার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত
ফাইল ছবি

চার বছর পর ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মানবপাচার সূচকে (ট্রাফিকিং ইন পারসন) রিপোর্টে একধাপ উন্নতি করে বাংলাদেশ। এই বছরও একই অবস্থানে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১ জুলাই প্রকাশিত ট্রাফিকিং ইন পারসন-২০২১ রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থান টায়ার-টু-তে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট মানবপাচার রোধে ১৬টি অগ্রাধিকার ভিত্তিক সুপারিশ করেছে।

সর্বশেষ ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মানবপাচার সূচকে টায়ার-২ এ অবস্থান করে বাংলাদেশ। এর আগে ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে রাখা হয়েছিল দ্বিতীয় স্তর অর্থাৎ টায়ার-টু তে। ২০১৭ সালে এক ধাপ নামিয়ে বাংলাদেশকে টায়ার টু’র ‘নজরদারিতে থাকা দেশের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গত বছর আবারও টায়ার-২ স্তরে ফিরে যায় বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বার্ষিক ‌‘ট্র্যাফিকিং ইন পারসন’ রিপোর্টে যথাযথ কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য ১৭টি দেশকে দোষারোপ করা হয়েছে। এসব দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সুপারিশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক বিদেশি সহায়তা সীমিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে ১৮৮টি দেশের মূল্যায়ন করা হয়েছে।

মানবপাচার পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্টেট ডিপার্টমেন্টের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেশগুলোকে তিনটি টায়ারে ভাগ করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে যেসব দেশ ট্রাফিকিং ভিকটিমস প্রোটেকশন অ্যাক্টসের ন্যূনতম মান পূরণে সক্ষম হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, সেসব দেশকে প্রথম স্তর বা টায়ার ওয়ানে রাখা হয়। টায়ার-টু আবার দুইভাগে বিভক্ত, টায়ার-টু এবং টায়ার-টু ওয়াচলিস্ট। সবশেষে রয়েছে তৃতীয় স্তর বা টায়ার-থ্রি।

দ্বিতীয় স্তরে রাখার কারণ হিসেবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের রিপোর্টে বলছে, বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টা থাকলেও পুরোপুরি মান অর্জন করতে পারেনি। বাংলাদেশের সরকার তাদের মানবপাচার প্রতিরোধের সক্ষমতা অনুযায়ী বৈশ্বিক মহামারির মধ্যেও তৎপরতা বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের উল্লেখযোগ্য তৎপরতার মধ্যে আছে- বিচার কাজ ত্বরান্বিত করা, মানবপাচার প্রতিরোধে গঠিত ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু করা এবং অন্য দেশের সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পাচার সংক্রান্ত কাজে সহযোগিতা করার কারণে। তা ছাড়া কুয়েতে মানবপাচারে অভিযুক্ত একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত করা এবং তার আসন সংসদে বাতিল করার ঘটনার কথাও বলা হয়েছে এর কারণ হিসেবে। বাংলাদেশ সরকার মানবপাচার রোধে তৈরি করা জাতীয় কর্মপরিকল্পনার ৯৫ শতাংশ ব্যয় অর্থায়ন করেছে বলেও তাতে উল্লেখ করা হয়।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, তবুও ন্যূনতম মান কিছু কিছু ক্ষেত্রে অর্জন করতে পারেনি। এর মধ্যে আছে- সাজার পরিমাণ কমে যাওয়া, রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের পাচারের বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে গেছে। এ ছাড়া ভিয়েতনামে কয়েকশ বাংলাদেশির পাচারের ঘটনা ঘটলেও সেটা যাচাই-বাছাই কিংবা তদন্ত করার পরিবর্তে পাচারের শিকার লোকদের জেলে পাঠানোর ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে যে সুপারিশগুলোর কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে আছে- বিচার কাজ বাড়াতে হবে এবং ফায়িদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, নিবন্ধিত রিক্রুটিং এজেন্সির দ্বারা কর্মীদের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ বন্ধ করে সরাসরি নিয়োগকর্তাকে টাকা দিয়ে নিয়োগের ব্যবস্থা; রোহিঙ্গা পাচারের বিষয়ে তদন্ত বাড়ানো; পাচারের শিকার ব্যক্তির যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিতে গাইডলাইন তৈরি; পাচারের শিকার ব্যক্তিদের দেশে-বিদেশে সেবার পরিমাণ বৃদ্ধি; কোর্টের আদেশ ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে সেবার সুযোগ দেওয়া; সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র ত্যাগের আগে অভিভাবকের অনুমতির বিষয়টি বাদ দেওয়া। এ ছাড়া রোহিঙ্গা পাচার বন্ধে ইন্টার সেক্টর সহযোগিতা অব্যাহত রাখা, কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ বাড়ানো, মধ্যস্বত্বভোগীদের রেজিস্ট্রেশন এবং রিক্রুটিং এজেন্টদের তদারকির কাজ বাস্তবায়ন করা, কর্মীদের জন্য প্রাক বহির্গমন ব্রিফিংয়ের মান উন্নয়ন করা, বৈধ ব্যবস্থার মধ্যেই রোহিঙ্গাদের অভিযোগ দায়ের করার ব্যবস্থা নেওয়া এবং আন্তর্জাতিক মানবপাচারের ঘটনা তদন্তে একটি মানসম্পন্ন গাইড লাইন করার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।