রাজধানীতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ

প্রতিনিয়ত রাজধানীতে বাড়ছে জীবনযাত্রায় ব্যয়। আয়ের তুলনায় অতিমাত্রায় বাড়ছে ব্যয়। করোনাভাইরাসের প্রভাবে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের আয় রোজগার ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে গত তিন বছরের মধ্যে ২০২০ সালে রাজধানীতে জীবনযাত্রার ব্যয় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

রাজধানীতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ

প্রতিনিয়ত রাজধানীতে বাড়ছে জীবনযাত্রায় ব্যয়। আয়ের তুলনায় অতিমাত্রায় বাড়ছে ব্যয়। করোনাভাইরাসের প্রভাবে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের আয় রোজগার ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে গত তিন বছরের মধ্যে ২০২০ সালে রাজধানীতে জীবনযাত্রার ব্যয় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ক্যাব জানিয়েছে, ২০২০ সালে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। 

বুধবার ক্যাব আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তাদের প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান। এ সময় যুক্ত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, ভোক্তা অভিযোগ নিষ্পত্তি জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন এবং জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম।

রাজধানী ঢাকায় ১৫ খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবা-সার্ভিসের মধ্যে থেকে ১১৪ খাদ্যপণ্য, ২২ নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী এবং ১৪ সেবা-সার্ভিসের সংগৃহীত মূল্য থেকে প্রতিবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ক্যাব।

ক্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ ও পণ্য ও সেবা-সার্ভিসের মূল্য বেড়েছে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। পূর্ববর্তী ২০১৯ সালে এ বৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। ২০১৮ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় এবং মূল্যবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৬ শতাংশ এবং ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ।

২০২০ সালে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বছরের শেষে আমন ধানের ভরা মৌসুমে চালের দামের ঊর্ধ্বগতি থেমে থাকেনি। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে চালের গড় মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। এরমধ্যে মোটা চালের দাম বেড়েছে ২৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ, পাইজাম চালে ২৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, বিআর-৮ ও বিআর-১১ চালে ২০ দশমিক ৬৮ শতাংশ, মিনিকেট চালে ১৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ, নাজিরশাইল চালে ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং সুগন্ধি চালের গড় দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ।

আটার মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে কেজি প্রতি ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। দেশি ও আমদানি করা ডালের দাম গড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। দেশি মসুর ডালে ২৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ, আমদানি করা মসুর ডালে ৪৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং খেসারির ডালে দাম বেড়েছে ২৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

এই বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ জানান, আমাদের দেশে মাথাপিছু আয় বেড়েছে এটা ঠিক আছে। তবে আমাদেরকে এটাও মনে রাখতে হবে করোনাকালীন কিছু সংখ্যক বড় ব্যবসায়ীর লোকদের আয় বাড়ার ফলে এটা হয়েছে। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের লোকদের বড় একটি অংশের আয় কমেছে। কারণ করোনার প্রভাবে তারা কর্ম হারিয়ে ফেলেছে।

তিনি বলেন, সরকারের উচিৎ হবে ডাটাবেজ তৈরি করা। প্রতিনিয়ত এই ডাটাবেজ আপগ্রেড করা। এই তালিকায় কেউ যুক্ত হবে আবার কেউ বাদ পড়বে। এমন ডাটাবেজ থাকলে নিম্ন আয়ের এই লোকদের কাছে আমরা দ্রুত অর্থ সহায়তাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করতে পারি।

নাজনীন আহমেদ বলেন, বর্তমানে সরকারের উচিৎ যেসব এলাকায় নিম্ন আয়ের লোকদের বসবাস এমন এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে সেখানে খাদ্য সহয়তা দেয়া। 

ক্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোজ্য তেলের দাম গড়ে বেড়েছে ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এর মধ্যে খোলা পাম অয়েলে ১৭ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। চিনি ও গুড়ের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।

মসলার দাম গড়ে বেড়েছে ২৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এর মধ্যে এলাচে বেড়েছে ১০৪ দশমিক ১৮ শতাংশ, কাঁচামরিচে ৩১ দশমিক ৯৬ শতাংশ, বিদেশি আদার দাম বেড়েছে ৩১ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং দেশি পেঁয়াজে ১৮ দশমিক ২৭ শতাংশ।

শাক-সবজির মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে গড়ে ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে করলার ৩৪ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং আলুতে ২৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

অন্যদিকে ২০২০ সালে ২০১৯-এর তুলনায় গরু ও খাসির মাংসের দাম বেড়েছে গড়ে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ, মুরগির দাম ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ আর ডিমের দাম গড়ে বেড়েছে ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। মাছের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে গড়ে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। গড়ে গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

রাজধানীতে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তের গড় বাড়িভাড়া বেড়েছে গড়ে ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ, এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ফ্ল্যাট বাসায় ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ, বস্তিতে ঘরভাড়া বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। সাধারণ শাড়ি-কাপড়ের দাম বেড়েছে গড়ে ৯ শতাংশেরও বেশি।

ওয়াসার পানি প্রতি হাজার লিটারে দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ। আবাসিকে বিদ্যুতের গড়মূল্য বেড়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।

এ প্রেক্ষাপটে জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্দেশ্যে ১৫ থেকে ২০ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখা। মূল্য স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব অর্পণ করে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় বা বিভাগ গঠন যুক্তিযুক্ত হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসা বিষয় এবং ভোক্ত বিষয় নামে দুইটি পৃথক বিভাগ সৃষ্টি করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব বলে ক্যাব মনে করে।

অন্যদিকে ব্যাংকগুলোতে ছয় শতাংশ হারে আমানতের সুদ নির্ধারণ করায় আমানতকারীর জমাকৃত অর্থ ক্রমান্বয়ে ক্রয়ক্ষমতা হারাচ্ছে। ছয়-নয় সুদ হারের সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বয়স্ক অবসরপ্রাপ্ত আমানতকারী ও গৃহিণী, যারা স্থায়ী আমানতের থেকে লব্ধ আয় থেকে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করেন। তাদের ক্রয় ক্ষমতা সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। জীবনমানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে ও দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির মূলনীতির সাথে ঋণ ও আমানতের নয়-ছয় সুদের হার নির্ধারণ সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এতে বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা লাভবান হচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেছেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান।