উঠে দাঁড়ালেন মমতা, হাঁটলেন চিরচেনা ভঙ্গিতে

চলতি বছরের ১০ মার্চ নন্দীগ্রামের বিরুলিয়ায় আহত হওয়ার পর তার সঙ্গী হয়েছিল হুইল চেয়ার। নির্বাচনী প্রচারণাও চালিয়েছেন হুইল চেয়ারে বসে। ডাক্তাররা বিশ্রামে থাকতে বললেও শোনেননি তিনি। এই দীর্ঘ ৫২ দিন পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াননি তিনি।

উঠে দাঁড়ালেন মমতা, হাঁটলেন চিরচেনা ভঙ্গিতে

চলতি বছরের ১০ মার্চ নন্দীগ্রামের বিরুলিয়ায় আহত হওয়ার পর তার সঙ্গী হয়েছিল হুইল চেয়ার। নির্বাচনী প্রচারণাও চালিয়েছেন হুইল চেয়ারে বসে। ডাক্তাররা বিশ্রামে থাকতে বললেও শোনেননি তিনি। এই দীর্ঘ ৫২ দিন পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াননি তিনি।

কিন্তু এবার দাঁড়ালেন, বলা যায় তৃণমূলের জয়ের খবরে দাঁড়ালেন। বলছি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কথা। 

৫২ দিন পর তাকে হাঁটতে দেখল গোটা দেশ। চলাফেরায় সেই দৃপ্ত ভঙ্গিমা। চেনা সেই ক্ষিপ্রতা। হুইল চেয়ার ছেড়ে হেঁটে এলেন, যখন নীলবাড়ির লড়াইয়ে তিনিই জয়ী। শুধু জয় নয় দুইশরও বেশি আসন তখন তার মুঠোয়। রোববার বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে অনুগামীদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে সোজা চলে গেলেন সংলগ্ন অফিসে।

মাঝে এক বারই নন্দীগ্রামে শেষ প্রচারের দিন জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় এক পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছিল তাকে। কিন্তু রোববার সেই পরিচিত ভঙ্গিমায় দেখা গেল তাকে। দাঁড়িয়ে জরুরি কথাও সারলেন ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তার পর সংক্ষিপ্ত বার্তা অনুগামীদের প্রতি।

বাড়ির সামনের তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে ওঠেন মমতা। কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এই জয় আপনাদের জন্য এসেছে। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই বলছি, কোনো ঝুঁকি না নিয়ে বাড়ি যান। ঠিক সময় কোভিড সংক্রমণ কমলে ঘোষণা করা হবে বিজয় মিছিলের দিন। ব্রিগেডে হবে’।

এবারে মমতার প্রতিপক্ষ ছিল বেশ শক্তিশালী। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, জেপি নড্ডা, যোগী আদিত্যনাথ ও ধর্মেন্দ্রপ্রসাদ ছিল সেই তালিকায়। আরও ছিলেন এ রাজ্যেরই দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীরা। গেরুয়া রথীদের ওই চক্রব্যূহে মমতা ছিলেন কেন্দ্রীয় লক্ষ্য। তবে তিনি বুঝে গিয়েছেন। ‘খেলা হবে’ যখন বলছেন, ময়দানে তখন তিনি সত্যিই একা। তিনি অবশ্য বার বারই বলেছেন তার সঙ্গে আছে বাংলার অগণিত মানুষ। 

কিন্তু রোববার যখন তিনি প্রকাশ্যে এলেন, ততক্ষণে সেই বিজেপির চক্রব্যূহ ছারখার। মমতা বিজয়ী। ২৯৪ আসনে তিনিই প্রার্থী, আগে বহুবার বলেছেন। সেই কথাকে সত্যি প্রমাণিত করেছেন যখন, সেই সময়ে নিজের দাঁড়ানো আসন নন্দীগ্রামে মাত্র কিছু ভোটে তিনি হেরে গিয়েছেন। তাকে পরোয়া না করেই জানিয়ে দিলেন, নন্দীগ্রামের রায় মাথা পেতে মেনে নিচ্ছেন। যদিও একই সঙ্গে কারচুপির তত্ত্বও তুলেছেন তিনি। ফলাফল নিয়ে আদালতে যেতে পারেন বলেও জানান।

দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসন প্রাপ্তি এবং ভোট শতাংশের হিসেব কষে নির্বাচনী বিশ্লেষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপিরও একটা অংশের সমর্থন গিয়েছে মমতার ঝুলিতে। বিজেপি যখন রাজ্যে ধর্মীয় মেরুকরণের প্রচার চালাচ্ছে, মমতা তখন মধ্যবিত্ত, মহিলা এবং সংখ্যালঘু ভোটারদের একত্রিত করে ফেলেছেন বলেই বিশ্লেষকদের একাংশের মত। তা না হলে এই জয় এবং ভোট শতাংশ তৃণমূলের ঝুলিতে আসা সম্ভব নয় বলেই তাদের ধারণা। 

রোববার সন্ধ্যায় কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে যান মমতা। পয়লা বৈশাখের আগের দিন রাতে ওই মন্দিরেই পুজো দিয়েছিলেন তিনি। পুরোহিতদের বলে এসেছিলেন, জয়ী হলে ফের আসবেন পুজো দিতে। আসন জয়ে ডাবল সেঞ্চুরি করে তাই মানত পূরণ করতেই কালীঘাট মন্দিরে গিয়েছিলেন মমতা।