একদিনে ২৮ লাখ মানুষ টিকা পেলেন
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শুরু হওয়া গণটিকা কর্মসূচির প্রথম দিনে দেশের ৫৯ জেলায় টিকা পেয়েছেন ২৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭০ জন মানুষ, যাদের ২৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৭২ জনই প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শুরু হওয়া গণটিকা কর্মসূচির প্রথম দিনে দেশের ৫৯ জেলায় টিকা পেয়েছেন ২৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭০ জন মানুষ, যাদের ২৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৭২ জনই প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন।
গতকাল শনিবার মধ্যরাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর ও সিলেট জেলার টিকা প্রদানের তথ্য ছিল না।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার দেশে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন ৫৩ হাজার ৭৯৮ জন।
তবে এদিন প্রথম ডোজ নেওয়া ২৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৭২ জনের কতজন গণটিকা কর্মসূচির আওতায় টিকা নিয়েছেন তা জানাতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে রাতের পালায় দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা বলেন, এ তথ্য জানানো সম্ভব না। কারণ নিয়মিত ও গণটিকাদান কর্মসূচির তথ্য আলাদাভাবে আসেনি।
সবমিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন এক কোটি ৩০ লাখ ৭২ হাজার ৯৬৯ জন, এদের দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা ৪৪ লাখ ৯৭ হাজার ৩১৫ জন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে ছয়দিনে ৩২ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দিতে শনিবার ১৫ হাজারের বেশি কেন্দ্রে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়।
সকাল থেকেই কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে সাধারণ মানুষের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই কর্মসূচি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চলবে ৯ অগাস্ট পর্যন্ত। এছাড়া প্রথমদিন বাদ পড়া ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ের ওয়ার্ডে টিকা দেওয়া হবে ৮ ও ৯ অগাস্ট। এই দুইদিন দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায়ও টিকা দেওয়া হবে।
আর ১০ থেকে ১২ অগাস্ট পর্যন্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে টিকা কর্মসূচি চলবে।
শনিবার প্রথম ডোজ টিকা নেওয়াদের ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৯৩৬ জন পুরুষ, আর ১২ লাখ ৬৮ হাজার ২৩৬ জন নারী।
সর্বমোট ২৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৭২ ডোজ টিকার মধ্যে চিনের সিনোফার্মের ২৪ লাখ ৯৯ হাজার ৪৫১ ও যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার ২ লাখ ৮৩ হাজার ৭২১ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।
শনিবার ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন ৮১ হাজার ২৮৭ জন, যাদের ২৩ হাজার ৬২৮ জন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দা।
তবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের গণটিকা কর্মসূচিতে টিকাপ্রাপ্তদের আলাদা তথ্য নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে।
শনিবার প্রথম ডোজ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ৭ লাখ ২১ হাজার ৯৭৩টি টিকা দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ২৯ জন ও কুমিল্লা জেলায় এক লাখ ৫৯ হাজার ৮৫৮ জন প্রথম ডোজ নিয়েছেন।
এছাড়া ময়মনসিংহ জেলায় এদিন প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন এক লাখ ৯ হাজার ২২৯ জন।
কোভিড-১৯ টিকা বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক জানিয়েছেন, যেসব এলাকায় শনিবার গণটিকাদান শুরু করা যায়নি, সেসব এলাকায় রোববার এই কর্মসূচি চলবে।
মহামারীতে আক্রান্ত ও মৃত্যু ঠেকাতে ১৪ কোটি নাগরিককে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকাদান শুরু হলেও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা টিকা সময়মতো না পাওয়ায় তার গতি ব্যাহত হয়।
ভারত থেকে টিকা না আসায় চীন থেকে টিকা কিনছে সরকার। পাশাপাশি টিকা সরবরাহের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকেও টিকা আসতে শুরু করেছে।
বর্তমানে দেশে মডার্না ও সিনোফার্মের পাশাপাশি দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
সরকারের কেনা, উপহার পাওয়া এবং কোভ্যাক্সের মাধ্যমে পাওয়া টিকা মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে এসেছে দুই কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯২০ ডোজ টিকা।
নতুন করে টিকা আসতে থাকায় বড় পরিসরে ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন করে বিরাট জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আসতেই পরীক্ষামূলক ধাপ হিসেবে এবার টিকা প্রদান করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ৭ অগাস্ট থেকে সাত দিনে প্রায় এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা জানালেও শেষ মুহূর্তে তা কমিয়ে ৩২ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
এই কর্মসূচিতে পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়স্ক জনগোষ্ঠী, নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
সরকারের টিকাদান টাস্কফোর্স বলছে, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ নাগরিককে টিকা দিতে ১৩ কোটি ১৮ লাখ ডোজ টিকা লাগবে। আর ৬০ শতাংশকে টিকা দিতে লাগবে প্রায় ২০ কোটি ডোজ টিকা।