ডা. লিপিকে হত্যার পর তোশকে আগুন
রাজধানীর কলাবাগানে নিজ বাসায় চিকিৎসক সাবিরা রহমান লিপির (৪৭) হত্যার বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের অপাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানিয়েছে, আগুনে দগ্ধ হয়ে নয়, চিকিৎসককে হত্যা করা হয়েছে। সাবিরাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর বিছানার তোশকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তবে দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়াতে পারেনি।
রাজধানীর কলাবাগানে নিজ বাসায় চিকিৎসক সাবিরা রহমান লিপির (৪৭) হত্যার বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের অপাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানিয়েছে, আগুনে দগ্ধ হয়ে নয়, চিকিৎসককে হত্যা করা হয়েছে। সাবিরাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর বিছানার তোশকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তবে দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়াতে পারেনি।
সোমবার সকালে কলাবাগান থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধারে যায়, পরিস্থিতি বিবেচনায় এসময় ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। তারা দগ্ধ লাশ উদ্ধার করে। ক্রাইম সিন জানায়, দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়াতে পারেনি। তবে, সাবিরার শরীরের কিছু অংশ দগ্ধ হয়।
সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের পরিদর্শক শেখ রাসেল কবির গণমাধ্যমকে বলেন, ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাবিরার শ্বাসনালী কেটে ফেলা হয়েছে। তার দেহে রক্ত ও পোড়ার ক্ষত আছে। তবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, এটি হত্যাকাণ্ড। আলামত দেখে মনে হয়েছে, মধ্যরাতের যেকোনো সময় হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে।
এদিকে, রক্তাক্ত অবস্থায় চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এ পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে হেফাজতে নিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ডিবি রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ওই ফ্ল্যাটে সাবলেটে থাকা এক শিক্ষার্থী, তার এক বন্ধু, বাড়ির দারোয়ান রমজান ও কাজের একজন মেয়েকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়া হয়েছে।’
কলাবাগান থানা পুলিশ সূত্র জানায়, ডা. সাবিরা দুটি বিয়ে করেছেন। তার প্রথম স্বামী চিকিৎসক ছিলেন। তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। পরে সাবিরা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সাবিরার দ্বিতীয় স্বামী সামসুদ্দিন আজাদ একটি বেসরকারি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তবে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গেও তার বনিবনা ছিল না। সাবিরার আগের স্বামীর ঘরে ২১ বছরের এক ছেলে এবং দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে ১০ বছরের এক মেয়ে রয়েছে।
সাবিরার মামাতো ভাই মো. রেজাউল হাসান বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে এটি একটি হত্যাকান্ড। বিষয়টিকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করার জন্য আগুনের ঘটনা সাজানো হয়েছে। আমরা এখনো কাউকে সন্দেহ করছি না। তদন্তের পর পুলিশ বিস্তারিত বলতে পারবে।’
সাবিরার মামাতো ভাই আরো জানান, সাবিরার এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে বড় মেয়ে ছোট। ছেলে বিবিএ পড়ে, মেয়ের বয়স ১০ বছর। ওনার স্বামী আবুল কালাম আজাদ এখানে থাকেন না। মনোমালিন্যের কারণে এক বছর ধরে আলাদা থাকেন সাবিরা-আজাদ। তবে ওনাদের ভেতরে যোগাযোগ ছিল এবং ভালো সম্পর্ক ছিল।
সাবিরার স্বামী সামসুদ্দীন আজাদ বলেন, আমি সকাল ১১টার দিকে খবর পেয়ে এখানে আসি। পুলিশ প্রথমে ভেতরে ঢুকতে দেয় নাই। পরে ভেতরে ঢুকে দেখি রক্তাক্ত লাশ। আমি কাউকে সন্দেহ করতে পারছি না। পুলিশের তদন্তের মাধ্যমে আমি এর সঠিক বিচার চাই।
নিহত চিকিৎসকের খালাতো বোন জাকিয়া খন্দকার মমি বলেন, ‘সে আমার মেজো খালার মেয়ে। বয়স ৪৭ এর মতো। গ্রিন লাইফ হাসপাতালে বেশ কয়েক বছর ধরে চাকরি করছে। তার স্বামী সাবেক ব্যাংকার। আজকে সাবিরার অফিস ছিল এবং বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। আমার মনে হয় আশেপাশের কেউ শত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করেছে।’
ডা. সাবিরা কলাবাগানের ৫০/১ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। তিনি গ্রিন লাইফ হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগের চিকিৎসক ছিলেন। ওই বাড়ির একটি ফ্ল্যাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের পিঠে দু’টি ও গলায় একটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তিনি ফ্ল্যাটের দু’টি রুম অন্য একজনকে সাবলেট দিয়েছেন।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস