দ্রুত এলপিজি-এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের দাবি ডিসিসিআই সভাপতির

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এর সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, গত ৫ দশকে শিল্পখাতের গতিধারাকে চলমান রাখতে প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালানির অন্যতম যোগদান হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। তবে আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সম্প্রসারণের ফলে জ্বালানির চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধির কারণে প্রায়ই শিল্পখাতে জ্বালানি সংকট দেখা যাচ্ছে। শিল্পখাতে জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় দ্রুততার সাথে এলপিজি ও এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি, পাশাপাশি এখাতের সার্বিক উন্নয়নে একটি সমন্বিত টেকসই কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জোরারোপ করেন।

দ্রুত এলপিজি-এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের দাবি ডিসিসিআই সভাপতির

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এর সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, গত ৫ দশকে শিল্পখাতের গতিধারাকে চলমান রাখতে প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালানির অন্যতম যোগদান হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। তবে আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সম্প্রসারণের ফলে জ্বালানির চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধির কারণে প্রায়ই শিল্পখাতে জ্বালানি সংকট দেখা যাচ্ছে। শিল্পখাতে জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় দ্রুততার সাথে এলপিজি ও এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি, পাশাপাশি এখাতের সার্বিক উন্নয়নে একটি সমন্বিত টেকসই কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জোরারোপ করেন।

শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক ওয়েবিনার তিনি এক কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী যুক্ত ছিলেন।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, সরকার ঘোষিত ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে শিল্পখাতের চাহিদামত জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই। বর্তমানে আমাদের আভ্যন্তরীন চাহিদার ২ শতাংশ মেটানো হয় এলপিজি’র মাধ্যমে এবং প্রান্তিক পর্যায়ে গৃহস্থালী ও শিল্পখাতে এলপিজি এবং এলএনজি’র চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টানরশিপের মাধ্যমে স্টোরেজ সুবিধা নিশ্চিতকরনের আহ্বান জানান তিনি।

প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেন, সরকার গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং জকিগঞ্জে সর্বশেষ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে, আশা করা যাচ্ছে, সেখান থেকে দীর্ঘসময় ধরে গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে, এর জন্য প্রায় ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পাইপলাইন স্থাপন করতে হবে। তিনি বলেন, করোনা মহামারীকালীন সময়েও ১০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা হয়েছে।

তিনি জানান, অনশোরে সক্ষমতা থাকায় বাপেক্সের মাধ্যমে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো অব্যাহত রয়েছে। এলএনজি ব্যবসায় ঝুঁকি কম থাকায় বর্তমানে সকলেই এর দিকে ঝুঁকছে। এলপিজি’র বাজার প্রায় ১২ লাখ টন এবং ২৯টি কোম্পানী স্থানীয় বাজারে এলপিজি অপারেটর হিসেবে কাজ করছে। তবে ৫৬ কোম্পানীকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ছোট ছোট জাহাজে এলপিজি আমদানি করায় খরচ বাড়ছে। তবে মাতারবাড়ীতে এলপিজি টার্মিনালের কার্যক্রম চালু হলে, এ খরচ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যাবে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, বর্তমানে আমাদের গ্যাসের রিজার্ভ ৬ টিসিএফ। সারাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য যে ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল, সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি। তিনি জানান, বর্তমানে ৩৩০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাসের মধ্যে নিজস্ব উৎপাদিত গ্যাসের ৭৪ শতাংশ আসে নিজস্ব খাত থেকে বাকী ২৬ শতাংশ আসে এলএনজি থেকে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সালে দেশীয় উৎপাদন হবে ১৬.৫ শতাংশ। আমদানিখাত থেকে আসবে ৮৩ শতাংশ, সেক্ষেত্রে শিল্পখাতসহ সব খাতে ব্যয় বাড়বে। এমন বাস্তবতায় অনুসন্ধান কার্যক্রম বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। এক্ষেত্রে সরকারের সাথে বেসরকারীখাতকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও অনুসন্ধানের জন্য দীর্ঘময়োদী পরিকল্পনা গ্রহণ অত্যন্ত আবশ্যক। 

মকবুল এলাহী বলেন, গ্যাস ব্যবহারে মিটার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে, সিস্টেম লস ও চুরি কামানো যেত। এটা হলে আরও ১০ থেকে ১২ লাখ মিটার গ্যাস লাগানো যাবে। সেইসঙ্গে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে। এলপিজি পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবান্ধব এবং আমাদের দেশে বর্তমানে ১.২ মিলিয়ন টন এলপিজি ব্যবহৃত হচেছ। গত এপ্রিল মাসে এলপিজি দাম নির্ধারনে প্রথমবারের একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। জুলাই মাসে প্রথম সপ্তাহে এলপিজি’র দাম পুনঃবিবেচনার বৈঠক শুরু হবে। এলপিজি’র দাম নিম্ন মধ্যবিত্তের শ্রেণির নাগালে নিয়ে আসা সম্ভব হলে, ২০২৫ সালে ৩ মিলিয়ন টন এলপিজি বাংলাদেশে বিক্রি হবে।

পেট্রোবাংলা’র গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেডের সাবেক পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার সালেক সুফীওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিল্পখাতের ভবিষ্যত জ্বালানি হলো এলপিজি ও এলএনজি। শিল্পখাতে প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে আমাদেরকে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের যৌক্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। গ্যাস অনুসন্ধানে বর্তমানে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ যুগোপযোগী নয়। অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের ৩০তম স্থানে রয়েছে।

অধ্যাপক মো. শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ২০৫০ সাল নাগাদ সারাবিশ্বে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৮৫ শতাংশ নাবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস হতে আসবে, যেখানে বাংলাদেশে ২০৪১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎতের ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য খাত হতে আসার পরিকল্পানা রয়েছে। 

বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, তৈরি পোষাক ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পখাতে গ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টেক্সটাইল, ডাইং, স্পিনিং প্রভৃতি খাতে দেশের ৭-৮ শতাংশ গ্যাস ব্যবহৃত হয়। গত ১০ বছরে আমাদের গ্যাস সরবরাহ বেড়েছে ৭৫৪ বিলিয়ন কিউটিক ফিট থেকে ৯৭৫ বিলিয়ন কিউবিক ফিটে।