নেত্রকোনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ!
নেত্রকোনা গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে একটি দরপত্র আহ্বানের পর দরপত্রের সকল শর্ত পূরণ না হওয়া স্বত্তেও কাজটি একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসিনুর রহমানের বিরুদ্ধে।
গোল্ডেন মনির, জিকে শামীমসহ বেশ কিছু ইস্যুতে গত কয়েক বছর ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদপ্তর। এবার এ আলোচনায় যুক্ত হয়েছে খোদ এই অধিদপ্তরের এক নির্বাহী প্রকৌশলীর নাম।
নেত্রকোনা গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে একটি দরপত্র আহ্বানের পর দরপত্রের সকল শর্ত পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও কাজটি একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসিনুর রহমানের বিরুদ্ধে।
নেত্রকোনা গণপূর্ত বিভাগের দরপত্র আইডি – ৫৩৩১১ এ এরকম অনিয়ম হয়েছে বলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বারাবর লিখিত অভিযোগও জানায় দরপত্রে অংশ নেওয়া ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের মধ্যে একজন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গত ১৮ মার্চ ২০২১ তারিখে ‘স্টারলাইট সার্ভিসেস লিমিটেড এন্ড এম/এস. নাইমা এন্টারপ্রাইজ (জেভি)’ কে এই দরপত্রের কাজের এনওএ (নোটিফিকেশন অফ এ্যাওয়ার্ড) প্রদান করেন।
অভিযোগে আরো জানানো হয়, জানা মতে এই প্রতিষ্ঠানটির সিমিলার ওয়ার্ক সার্টিফিকেটটিও সঠিক নয়। যা দরপত্রে অংশ নেওয়া অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো এই নির্বাহী প্রকৌশলীকে বারবার মোখিকভাবেও অবহিত করে। কিন্তু তিনি তা আমলে না নিয়ে ‘স্টারলাইট সার্ভিসেস লিমিটেড এন্ড এম/এস. নাইমা এন্টারপ্রাইজ (জেভি)’ প্রতিষ্ঠানটিকে রেস্পন্সিভ ঘোষণা করে এনওএ প্রদান করেছেন।
অভিযোগে জানানো হয়, এই বিষয়ে গত ২১ মার্চ ২০২১ তারিখে নির্বাহী প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে অবহিত করা হলেও তিনি কোন কার্যকর ভূমিকা গ্রহন করেননি।
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে নেত্রকোনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসিনুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রকৌশল নিউজকে বলেন, কাজটি আসলে কাউকে পাইয়ে দেওয়া হয়নি। বৈধ পন্থায় যারা কাজটি পাবার যোগ্যতা রাখে তাদেরকেই দেওয়া হয়েছে।
দরপত্রের চাহিদা মোতাবেক সকল শর্ত কি সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি পূরণ করতে পেরেছিল কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দরপত্রের চাহিদা মোতাবেক এই প্রতিষ্ঠানটি সকল শর্ত পূরণ করতে পেরেছে বলেই তারা কাজটি পেয়েছে। এখানে লুকোচুরির কিছুই নেই। এটাতো ইজিবি’র টেন্ডার। অনলাইনে তো সবাই সব কিছুই দেখতে পায়। এখানে শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় থাকে।
সকল শর্ত পূরণ করেই যদি কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই দরপত্রের কাজটি পেয়ে থাকে তাহলে প্রধান প্রকৌশলী বরাবর কেন লিখিত অভিযোগ জমা পড়লো এই প্রশ্নের উত্তরে মো. হাসিনুর রহমান বলেন, যারা এই দরপত্রে অংশ গ্রহন করে কাজটি পায়নি তারা অনেকটা রোষানল থেকে এই অভিযোগগুলো করেছে। এছাড়া আর কিছুই না। যে অভিযোগগুলো করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন।
নেত্রকোনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসিনুর রহমানের বিরুদ্ধে জমা পড়া লিখিত অভিযোগের বিষয়ে ময়মনসিংহ গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ.কে.এম. কামরুজ্জামান প্রকৌশল নিউজকে বলেন, এই বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত আছি। বিষয়টি নিয়ে একটু ঝামেলা হচ্ছে এটাও ঠিক, তবে আমরা আমাদের কার্যক্রমও করছি। কিন্তু এই বিষয়ে কোন তথ্য এখন দেওয়া যাবে না।
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসিনুর রহমানের বিরুদ্ধে দরপত্র আহ্বানের পর দরপত্রের সকল শর্ত পূরণ না হওয়া স্বত্তেও কাজটি একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ সামছুদ্দোহার সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন কলটি রিসিভ করেননি।
এমনকি এই বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে প্রতিবেদক তাকে মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি তার কোন প্রতিউত্তর দেননি।
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসিনুর রহমানের বিরুদ্ধে দরপত্রের শর্তপূরণ না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার লিখিত অভিযোগটি জমা পড়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর।
এই অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মাদ শামীম আখতারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রকৌশল নিউজকে বলেন, এই বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ আমি পেয়েছি। বিষয়টি সম্পর্কে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।