ব্রাজিন্টিনা ধ্রুপদি লড়াই, উত্তেজনার পারদ আকাশচুম্বি!
বাংলাদেশ সময় রোববার ভোর ৬টায় আঞ্চলিক টুর্ণামেন্ট কোপা আমেরিকার ফাইনাল মুখোমুখি হবে আকাশী নীল এবং হলুদ জার্সির মেসি-নেইমার।
ফুটবল মানেই যেন সারাবিশ্বের কোটি দর্শকের বাড়তি উন্মাদনা। বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশে উত্তেজনার পারদ সবসময় একেবারে আকাশচুম্বি। আর তা যদি হয় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনাল, তা যে কোন ধরনের উন্মাদনা সৃস্টি করে সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাই তার প্রমাণ। বাংলাদেশ সময় রোববার ভোর ৬টায় আঞ্চলিক টুর্ণামেন্ট কোপা আমেরিকার ফাইনাল মুখোমুখি হবে আকাশী নীল এবং হলুদ জার্সির মেসি-নেইমার। চলুন দেখা যাক দুই দলের একটা তুলনামুলক পারফরমেন্স চিত্র।
যে টুর্ণামেন্ট নিয়ে সম্প্রতি এত উত্তেজনা সেই কোপা আমেরিকার ১৪ বার শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে আর্জেন্টিনা। আর ৯ বার শিরোপা নিয়েছে ব্রাজিল। তবে কোপা আমেরিকা ফুটবল টুর্ণামেন্টের শিরোপার দৌড়ে সবথেকে এগিয়ে কিন্তু উরুগুয়ে। তাদের কাছে এই শিরোপা গেছে ১৬ বার। ১শ ৫ বছরের ইতিহাসের শুরুটা ছিল দক্ষিণ আমেরিকার শিরোপার লড়াই দিয়ে। ১৯৭৫ সালে তা কোপা আমেরিকার লড়াইয়ে পরিণত হয়। আরো ভালো করে বললে ল্যাটিন আমেরিকার ফুটবল লড়াইয়ের মর্যাদা লাভ করেছে বর্তমানের কোপা আমেরিকা শিরোপা। ব্রাজিল যে ৯বার এই মর্যাদার শিরোপা জিতেছে চলতি বছরসহ এ নিয়ে তাদের দেশে খেলা হয়েছে মোট ৬বার। পক্ষান্তরে আর্জেন্টিনা এই শিরোপার লড়াইয়ের আয়োজক ছিল সর্বাধিক ৯ বার।
কোপার লড়াইয়ে দুই দলের মুখোমুখি দেখা হয়েছে মোট ৩৩ বার। যেখানে আর্জেন্টিনা জয় পেয়েছে ১৫বার আর ব্রাজিল জয় পেয়েছে ১০ বার। বাকি ৮টি ম্যাচ ড্র করেই ড্রেসিংরুমে ফিরেছে দুই দলের সাবেকরা। গোল সংখ্যায়ও এগিয়ে আকাশী-নীল জার্সিধারীরা। ৩৩ ম্যাচের ৯২ গোলের মধ্যে ৫২টি এসেছে আর্জেন্টাইন শিবির থেকে বাকি ৪০টি এসেছে ব্রাজিলিয়ান শিবির থেকে।
আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক টুর্ণামেন্টের শিরোপা জয়ে আর্জেন্টিনার থেকে মাত্র এক ধাপ এগিয়ে ব্রাজিল। সবমিলিয়ে আর্জেন্টিনার ঘরে উঠেছে ১৯টি শিরোপা। অন্যদিকে ব্রাজিলের শিরোপা সংখ্যা ২০।
তবে ফুটবলের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবথেকে মর্যাদার লড়াই ফিফা বিশ্বকাপের ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের কাছে বেশ খানিকটা দূরে আর্জেন্টিনা। এখানে অর্ধেকেরও কম শিরোপা অর্থ্যাৎ মাত্র ২টি শিরোপা গেছে আর্জেন্টিনার ঘরে।
এখন কথা হলো আঞ্চলিক একটা ফুটবল টুর্ণামেন্ট নিয়ে তৃতীয় বিশ্বের একটা দেশ বাংলাদেশে কেন এত উত্তেজনা। কেন রাজনীতির মত এখানেও বিবেধ। কথার ফুলঝুরি কেন এই দুই দলকে নিয়ে বেশি। প্রশ্ন আসতে পারে একই সময় ইউরোপের সুন্দর ফুটবল টুর্নামেন্ট ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপ নিয়ে তো তেমন কোনো উত্তেজনা নেই। চলুন ব্রাজিল আর্জেন্টিনা খেলার উত্তেজনার কতগুলো কারণ খুজে বের করার চেস্টা করা যাক। শুরুতেই বলে নেই-পাঠকের মতের সাথে এই মত নাও মিলতে পারে।
কারণ ১- বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে যখন ফুটবল খেলা দেখা শুরু করে তখন মূলত আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ম্যারাডোনা এবং ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলের যুগ। ফলে দুই কিংবদন্তির খেলা দেখে মুগ্ধ বাংলাদেশের ফুটবল প্রেমীরা। ঠিক ঐ সময়টাতেও বাংলাদেশ ফুটবল দলের বেশ নজরকাড়া পারফরমেন্স ছিল। ফলে আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের জন্য আলাদা আলাদা সমর্থক গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। পরবর্তী প্রজন্ম হয়তবা তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শুনে এবং দেখে বর্তমানের সমর্থকগোষ্ঠীর সাথে মিশে গেছে।
কারণ ২- বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে যে গুটি কয়েক তারকা ফুটবলার মাঠ দাপিয়ে নজরকাড়া পারফরমেন্স দিয়ে দর্শকদের মন জয় করেছে তাদের মধ্যে মেসি এবং নেইমার যথাক্রমে আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের ১০ নম্বর জার্সিধারী খেলোয়াড়। দুইজনই আবার স্ট্রাইকার। গোল সংখ্যায় একজন আরেকজনকে টেক্কা দেয়ার চেস্টা সবসময়ই রয়েছে তাদের। একই ক্লাবে খেলা এই দুই খেলোয়াড়ের মধ্যে নানা খুনসুটি থাকলেও সেখানে স্পস্ট মানষিক বিবেধ তৈরি করে রেখেছে বাংলাদেশের দর্শকরা। কারণ মানুষের পারসেপশন প্রতিজনেই ভিন্ন হয়ে থাকে।
কারণ ৩-বাংলাদেশের মানুষের বিনোদনের অন্যতম প্রধান উপায় হলো টেলিভিশন। খেলা বোঝা আর না বোঝা সেটা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। গোল যে দল বেশি দেবে তাদের পাল্লায় ভারি হয়ে যায় দিনশেষ। পুরো মাঠ কোন দল কেমন খেললো সেটা এখানে মুখ্য বিষয় নয়। কোন দল কয়টা গোল দিতে পারলো সেটিই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। একসময়ে পেলে কিংবা ম্যারাডোনার জোয়ার এখন মেসি কিংবা নেইমারের ঘাড়ে। তাদের খেলা দেখার জন্যই দর্শকদের আগ্রহ বেশি। এখানে দল নয় ব্যক্তি মেসি কিংবা নেইমারই শেষরাতের নায়ক কিংবা খল নায়ক হতে চলেছে বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে। টেলিভিশনে নায়ক এবং খলনায়ক দেখে বড় হওয়া বাঙ্গালী এখন খেলার মাঝেও সেটা খোজার চেস্টার ব্যস্ত।
সবশেষে একটাই কথা- খেলা হবে ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের মারাকানায়। জয় পরাজয়ে লাভ ক্ষতি হবে তাদেরই বেশি। কোন দল শিরোপা জিতলে বাড়তি উন্মাদনা হবে তাদের দেশের মানুষের মনে। হারলে কস্টও পাবে তারা বেশি। আমরা দর্শক হিসেবে খেলা উপভোগ করবো, কোনো একটি দলকে সাপোর্ট করবো। তবে দিনশেষে সবাই আমরা বাংলাদেশী। সেখানেই আমাদের ঐক্য ধরে রাখার চেস্টা করবো। ভিনদেশী কোনো খেলা নিয়ে জাতিগত বা আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব না করাটাই আমার আপনার ব্যক্তিগত কর্তব্য। অপেক্ষা মাত্র কয়েক ঘন্টার। তারপরই ফটুবলের ধ্রুপদি লড়াই। শুভ কামনা দুই দলের জন্য। একই সাথে বাংলাদেশের মত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ব্রাজিল এবং আর্জেন্টাইন সমর্থকদের জন্য।