ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা অপ্রকাশিত থাকা রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা: তথ্যমন্ত্রী
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে প্রকাশ না করা ছিলো জাতীয়ভাবে আমাদের ভুল ও রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা এবং যারা বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে খাটো করে দেখানোর অপচেষ্টা করেছেন, তারা অন্যায় করেছেন।’
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে প্রকাশ না করা ছিলো জাতীয়ভাবে আমাদের ভুল ও রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা এবং যারা বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে খাটো করে দেখানোর অপচেষ্টা করেছেন, তারা অন্যায় করেছেন।’
মন্ত্রী বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু’ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৪৮ সালে ঢাকায় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ ঘোষণার প্রতিবাদে আন্দোলন সংগঠিত করার কারণেই ১১ মার্চ ১৯৪৮ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১৫ মার্চ মুক্তি লাভ করে আবার পরদিন ১৬ মার্চ ভাষার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগ্রাম পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৯ সালে ডিসেম্বর মাসে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, একটানা ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকাকালীনও তিনি কিন্তু বসে ছিলেন না। সেখান থেকেই তিনি ভাষা আন্দোলন সংগঠিত করার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এমনকি তিনি জেলখানায় অনশন করেছেন। এই বিষয়গুলো আসলে আগে কখনো জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়নি এবং এটি অপ্রকাশিত রাখা একটি বড় অন্যায় ছিল।’
ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে ড. হাছান বলেন, ‘একটি কথা অনেকে জানেনা, ৫২ সালের পরে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু ৫৬ সালে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করার আগ পর্যন্ত বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হলেও সেটাকে কার্যকর করা হয়নি। ৫৬ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে সরকারি কার্যকরণে নিয়ে আসা হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে ২১ শে ফেব্রুয়ারি পালন, শহীদ মিনার সরকারিভাবে নির্মাণও তখনই শুরু হয়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং এখন প্রকাশিত সিক্রেট ডকুমেন্ট পড়লে বোঝা যায়, বঙ্গবন্ধু আসলে পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা চিন্ত করেছেন এবং সেই লক্ষ্যে তিনি কাজ শুরু করেছিলেন। কখন কি বিষয় বলতে হয়, সেটি বঙ্গবন্ধু জানতেন, সেজন্যই বঙ্গবন্ধু রাজনীতির কবি।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যদি ’৬৬ সালে ৬ দফা ঘোষণা না করে তার মনে যে স্বাধীনতার কথা ছিল সেটি বলতেন, তাহলে তো স্বাধীনতা আসতো না। বঙ্গবন্ধু ৬৬ সালে ৬ দফা ঘোষণা করে প্রথমে বাঙ্গালীর মনন তৈরি করেছেন স্বাধীনতার জন্য। এরপর তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, ৬ দফার পক্ষে ম্যান্ডেট নিয়েছেন। তারপর তিনি জানতেন যে ৭০ সালে নির্বাচনের পর পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। কি করতে হবে সেই পরিকল্পনাও তার ছিল। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু ‘বাংলাদেশ স্বাধীন’ সেই কথা তিনি বলেন নাই। যে মহূর্তে স্বাধীনতা ঘোষণা করা প্রয়োজন, সে মুহূর্তে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এভাবে বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম সংগঠিত করে বাঙালিকে স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন।’
আমরা বঙ্গবন্ধুকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বলি কারণ হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির জন্য কখনো স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল না, বঙ্গবন্ধুই ঘুমন্ত বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত করে, সংগঠিত করে স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে, স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে তার নেতৃত্বে বাঙালিদের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশ জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন- বলেন তথ্যমন্ত্রী। বাসস
প্রকৌশল নিউজ/এস