ভুয়া বিল চালানে রেলের প্রকল্পে নয় ছয়!

ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লক্ষ অর্জনে উন্নয়ন কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কিছু অসাধু প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদারা। তারা নিজেদের পকেট ভারী করতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজকে বাধাগ্রস্থ করতে নানান ধরনের অপচেষ্টায় লিপ্ত। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এদের কারণেই সরকারের একদিকে যেমন উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, তেমনি টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছেনা। 

ভুয়া বিল চালানে রেলের প্রকল্পে নয় ছয়!
ফাইল ছবি

ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ অর্জনে উন্নয়ন কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কিছু অসাধু প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদারা। তারা নিজেদের পকেট ভারী করতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজকে বাধাগ্রস্থ করতে নানান ধরনের অপচেষ্টায় লিপ্ত। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এদের কারণেই সরকারের একদিকে যেমন উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, তেমনি টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছেনা। 

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে রেল লাইনের ব্যালাস্ট (পাথর) সরবরাহের ভূয়া চালান বানিয়ে ঠিকাদারের চূড়ান্ত বিল দেওয়ায় সরকারের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চুক্তিপত্র নং- ১৩/বিআর/ডাব্লিউজেড/ব্যালাস্ট/রায়পুর/১৬-১৭/ডাব্লিউ। ওই সময় রাজশাহীর পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আফজাল হোসেনের যোগসাজসে পাথর সরবরাহের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও ঠিকাদার আশরাফ আলী ও সফল এন্টারপ্রাইজকে অবৈধ্যভাবে সুযোগ করে দেয়। 

সূত্রে আরো জানা গেছে, ২০১৮ সালে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে আফজাল চাকুরীতে যোগ দানের পর এসএসএই/পথ/সিরাজগঞ্জ বাজার এবং এসএসএই/কার্য/সিরাজগঞ্জ বাজারে ৩০ জানুয়ারী ২০১৮ তে ২২৭.১৩ কিউবিক মিটার এবং ২৫ মার্চ ১০৮০.৩৭ কিউবিক মিটার ব্যালাস্ট সরবরাহের ভূয়া চালান প্রস্তুত করে। দশ মাস পর আফজাল হোসেন ঠিকাদার সফল এন্টারপ্রাইজকে ৮৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকার বিল দেয় যাতে সরকারের পুরো টাকা ক্ষতি হয়। অথচ, সত্যিই যদি এই সেই সময় পাথর সরবরাহ করা হতো ডিসেম্বর ১৮ এর মধ্যে বিল পরিশোধ করা হতো বলে জানা গেছে।

আরো জানা গেছে, কাজের চুক্তিপত্র নং-১৪/বিআর/ডাব্লিউজেড/ব্যালস্ট/মুলাতলী/ডাব্লিউ চুক্তিপত্রে ঠিকাদার আশরাফ আলী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করতে পারলেও পরবর্তিতে কাজের সময় বৃদ্ধি করে। সেই সময়কার প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিম) রমজান আলী সেই ঠিকাদারকে চুক্তিপত্রের শর্তানুয়ায়ী কাজ শেষ না করার জন্য ডিইএন/২/পাকশী আরিফুল ইসলামকে নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে রমজান আলী বদলি হয়ে যাওয়ার পরে প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিম) মো. আফজাল হোসেন ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ট্রাক) মো. আবু জাফর মিয়ার নির্দেশে ডিইএন/২/পাকশী আরিফুল ইসলাম এবং এইএন/পাকশী মো. আশরাফ উদ্দিন, এসএসএই/পথ/সিরাজগঞ্জ বাজার এবং এসএসএই/কার্য/সিরাজগঞ্জ বাজার ১৮ সালের মার্চ মাসে ২০২০.৫২ কিউবিক মিটার ব্যালাস্ট সরবরাহের চালান প্রস্তুত করে। ওই চালানে মোট এক কোটি ১৯ লাখ টাকার বিল সরবরাহ করে। অথচ, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলীর লিখিত আদেশ থাকা সত্ত্বেও বিধি বহির্ভূতভাবে ব্যালাস্ট সরবরাহ না করেই অসমাপ্ত কাজটি সমাপ্ত দেখিয়ে বিল দেন।

আরেটি কাজের চুক্তিপত্র নং ১৯/বিআর/ডাব্লিউজেড/ব্যালাস্ট/হিলি/১৬-১৭/ডাব্লিউ সেখানে প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিম) মো. আফজাল হোসেন ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ট্রাক) মো. আবু জাফর মিয়ার নির্দেশে পডিইএন/২/পাকশী মো. আরিফূল ইসলাম ও এইএন/পার্বতীপুর এসএসএই/কার্য/হিলি এবং এসএসএই/পথ/হিলি ১৮ সালের ব্যালাস্টের যে চালান প্রস্তত করে। সেখানে ১০৪২.৭১ কিউবিক মিটার ব্যালাস্ট সরবরাহের জন্য ঠিকাদার আশরাফ আলীকে ৬৩ লাখ টাকা বিল দেওয়ায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৬৩ লাখ টাকা। 

অপর একটি কাজে ৮০০ কিউবিক মিটার পাথর সরবরাহ যার চুক্তিপত্র নম্বার- ৫৪.০১.৮১০০.১৫৫.০২.০৩২.১৭/২৬ সেখানে ঠিকাদার সফল এন্টারপ্রাইজ চুক্তিপত্রের কয়েকবার সময়সীমা বর্ধিত করার পর চুক্তিপত্রের সময়সীমার মধ্যে ৩৭০ কিউবিক মিটার পাথর সরবরাহ করে। চুক্তি পত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার পর সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী উক্ত অসমাপ্ত কাজটি সমাপ্ত করার জন্য চুক্তির শর্তানুযায়ী জরিমানাসহ বিল চূড়ান্ত করণের জন্য ডিইএন/লালমনিরহাটকে লিখিতভাবে নির্দেশ দেয়। কিন্ত রমজান বদলি হয়ে যাওয়ার পর সেখানে নিয়োগকৃত প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিম) মো. আফজাল হোসেন ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ট্রাক) মো. আবু জাফর মিয়ার নির্দেশে ৪২৩০ কিউবিক মিটার পাথরের জন্য ২৩ লাখ টাকা বিল দেয়। যাতে সরকারে ক্ষতি হয়েছে ২৩ লাখ টাকা।
 
সান্তাহার রেলওয়ে সাইডিং এ এক হাজার কিউবিক মিটার ব্যালাস্ট সরবরাহের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সফল এন্টারপ্রাইজ, টিকাপাড়া, ঘোড়ামারা, রাজশাহী কয়েকবার চুক্তিপত্রের মেয়াদ বর্ধিত করার পরেও মাত্র ৪৯৯ কিউবিক মিটার ব্যালাষ্ট সরবরাহ করে। চুক্তিপত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং চুক্তিপত্রের নির্ধারিত সময় সীমার মধ্য সম্পূর্ণ ব্যালাস্ট সরবরাহ করতে ঠিকাদার ব্যর্থ হওয়ায় সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. রমজান আলী উক্ত অসমাপ্ত কাজটি চুক্তিপত্রের শর্তানুযায়ী জরিমানাসহ বিল চূড়ান্ত করার জন্য ডিইএন/২/পাকশীকে লিখিতি আদেশ দেন। কিন্ত চুক্তিপত্রের মেয়াদের মধ্যে ৫০২.১৯ কিউবিক মিটার ব্যালাস্ট সরবরাহের ভূয়া চালান তৈরি করে চূড়ান্ত বিল দিয়ে সরকারের ১৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

অন্যদিকে, প্যাকেজ ডিডি-ডাব্লিউ (২)-৯ এ্যাট মৌচাক রেলওয়ে সাইডিং: সাপ্লাই অব ৩২০০ কিউবিক মিটার মধ্যপাড়া অর ইকুইবেলেন্ট ভ্যারাইটি হার্ড রক স্টোন ব্যাসাল্ট অব সাইজ ১.৫ টু ২’ টু ইমপ্রুভ বাইডিং কোয়ালিটি এবং রেগুলার মেইনটেইন্স ইন বিটুইন মৌচাক টু জয়দেবপুর সেকশন কাজের চুক্তিপত্র নম্বার- ২১/বিআর/ডাব্লিউজেড/ব্যালাস্ট/মৌচাক/১৬-১৭/ডাব্লিউ কাজের জন্য মের্সাস সরদার ট্রেডার্স রাজশাহীকে ২৬১৩.৮০ কিউবিক মিটার কাজ দেয়। সেখানে সে সময়কার প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিম) আফজাল হোসেনের নির্দেশে ডিইএন/২/পাকশী মো. আরিফুল ইসলাম এইএন/জয়দেবপুর নাজিম কায়ছার এসএসএই/পথ/জয়দেবপুর এবং এসএসএই/কার্য/জয়দেবপুর ১৮ সালের জুন মাসে ৫০২.১০ কিউবিক মিটার ব্যালাস্ট সরবরাহের ভূয়া চালান প্রস্তত করে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। 

এতোসব সরকারের ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে সেই সময়কার প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিম) রমজান আলী প্রকৌশলনিউজ ডটকমকে বলেন, আমি সরকারের টাকার অপচয় রোধেই অধিনস্তদের নির্দেশনা বুঝিয়ে দিয়েছি যাতে কাজটি সঠিকভাবে হয়। 

যার সময় চালানগুলোর বিল ছাড় দেওয়া হয় সেই সময়কার প্রধান প্রকৌশলী (বর্তমান ঢাকা-টঙ্গী রেলওয়ের প্রকল্প পরিচালক) আফজাল হোসেন বলেন, এসব ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও শত্রুতামূলক। প্রধান প্রকৌশলী কখনই বিল দিতে পারেন না।

জনৈক শোভন আলীর করা অভিযোগ আমলে নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেখানে শোভন আলী অভিযোগে উল্লেখ করে, আফজাল হোসেন ২০১৮ সালে রাজশাহীতে প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিম) হিসেবে যোগদানের পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিকট হতে ঘুষ নিয়ে ভূয়া চালানের মাধ্যমে এসব বিল দিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি করে। সেখানে অভিযুক্ত ঠিকাদার ও প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- আশরাফ আলী, সফল এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স সরদার ট্রেডার্স।

বিষয়টি আমলে নিয়ে ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বরের রেলপথ মন্ত্রলালয়ের এক অফিস আদেশে তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়।

কিন্ত, রেলওয়ে সূত্রগুলো বলছে ভিন্ন কথা: তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত বিল প্রদানকারী কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সরকারী কোটি কোটি টাকা বিল প্রদান করা হয়। ফলে, প্রকল্পগুলোর অবকাঠামো  ও উন্নয়ন ব্যাহত হয়। 

ভূয়া চালানে বিল : ১০ দিনের প্রতিবেদন দেড় বছরেও পায়নি রেল মন্ত্রণালয়

প্রকৌশল নিউজ/এসআই