মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল চুরি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’, আমরা ক্ষুব্ধ : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গায়েব হওয়ার ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, এ ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং এ ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ। এ ব্যাপারে যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার আমরা নিয়েছি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গায়েব হওয়ার ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, এ ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং এ ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ। এ ব্যাপারে যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার আমরা নিয়েছি।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
ফাইল চুরির ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত করছে। তদন্ত করে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, আমরা তা নেব।
সচিবালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শাহাদৎ হোসাইনের কক্ষের লাগোয়া ঘর থেকে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের কেনাকাটার ১৭টি নথি খোয়া গেছে। গত ২৭ অক্টোবর নথিগুলোর ফাইল কেবিনেটে রাখা হয়েছিল। পরের দিন ফাইলগুলো আর পাওয়া যায়নি। বিষয়টি তদন্ত করছে সিআইডি।
এ ঘটনায় পরদিন বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নাদিরা হায়দার বাদী হয়ে মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৭টি নথি খোয়া যাওয়ার ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
জিডিতে ১৭টি নথির নম্বর ও বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য মেডিকেল কলেজের কেনাকাটা সংক্রান্ত একাধিক নথি, ইলেকট্রনিক ডেটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি, রিপোর্ট অধিদপ্তরের কেনাকাটা, ট্রেনিং স্কুলের যানবাহন বরাদ্দ ও ক্রয় সংক্রান্ত নথি। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একাদিক প্রকল্পের নথি খোয়া গেছে বলেও জিডিতে উল্লেখ করা হয়।
ফাইল চুরির এই ঘটনায় মন্ত্রণালয়টির অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. শাহ্ আলমকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (চিকিৎসা শিক্ষা) মো. আহসান কবীর এবং উপসচিব (চিকিৎসা শিক্ষা-১) মোহাম্মদ আবদুল কাদের।
এদিকে ৩১ অক্টোবর সিআইডি ফরেনসিক বিভাগ এবং শাহবাগ থানা পুলিশ সেখানে গিয়ে তদন্ত চালায়। তদন্তের ধারাবাহিকতায় মন্ত্রণালয়ের ৯ জন কর্মচারী ও একজন ঠিকাদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে সিআইডি।
তিন দিন আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৬ কর্মচারী এবং গতকাল (১ নভেম্বর) আরও ৩ কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত তাদেরকে কোনো মামলায় গ্রেফতার কিংবা আটক দেখানো হয়নি। এরা হলেন- মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা অহিদ খান, মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী সেলিম, হাবিব বেল্লাল পলাশ, আব্দুল বারী, আয়েশা সিদ্দিকা, যোশেফ সরদার, বাদল, মিন্টু এবং রাজশাহীর ঠিকাদার নাসিমুল ইসলাম গণি টোটন।
এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ফাইল গায়েবের এই ঘটনায় গতকাল (১ নভেম্বর) রাতে রাজশাহী থেকে ঠিকাদার নাসিমুল ইসলাম গণি টোটনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় নিয়ে এসেছে সিআইডি। টোটনকে সোমবার সন্ধ্যায় সিআইডির ঢাকার একটি দল রাজশাহী মহানগরীর কেশবপুর এলাকায় টোটনের বাসায় অভিযান চালায়। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওই বাসায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় সিআইডি কাউকে ওই বাড়িতে প্রবেশ করতে বা বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি। এরপর রাত সাড়ে ১০টায় সিআইডি সদস্যরা তাকে একটি মাইক্রোবাসে ঢাকার নিয়ে আসে।
সিআইডির রাজশাহীর বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল জলিল বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১৭টি ফাইল গায়েব হয়েছে। এর মধ্যে একটি ছিল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কেনাকাটা সংক্রান্ত। ওই কেনাকাটার ঠিকাদার ছিলেন টোটন। এ ঘটনায় সিআইডি মনে করেছে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। সিআইডি হেডকোয়ার্টারের নির্দেশনার কারণে তাকে ঢাকা পাঠানো হয়েছে। তাকে এখনো গ্রেফতার বা আটক দেখানো হয়নি।