রোহিঙ্গাদের টাকা খাচ্ছে ইপসা!
কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিও ইয়ং পাওয়ার ইন স্যোশাল এ্যাকশান (ইপসা) বিরুদ্ধে অভিযোগ, রোহিঙ্গাদের সহায়তার নামে আসা টাকা তারা বিভিন্ন কায়দায় আত্নসাত করছেন। ফলে, প্রকৃত সুবিধাভোগী রোহিঙ্গারা তাদের নিশ্চিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সহায়তাকারী এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে নানা সময় বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে। তবে এবার শুধু অভিযোগেই সীমাবদ্ধ নেই। অভিযোগ আমলে নিয়ে তা তদন্তের জন্য মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিও ইয়ং পাওয়ার ইন স্যোশাল এ্যাকশান (ইপসা) বিরুদ্ধে অভিযোগ, রোহিঙ্গাদের সহায়তার নামে আসা টাকা তারা বিভিন্ন কায়দায় আত্নসাত করছেন। ফলে, প্রকৃত সুবিধাভোগী রোহিঙ্গারা তাদের নিশ্চিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সংস্থাটির বিরুদ্ধে আসা যে অভিযোগ নিয়ে দুদক তদন্ত করছে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের জন্য মালামাল আনা-নেওয়ায় ট্রাক ভাড়া বেশি দেখানো ও পণ্যের ওজন কম দেওয়া, মালপত্র কেনার সময় সাপ্লাইয়ারদের দর বাড়িয়ে কমিশন নেওয়া, ঘর তৈরির টেন্ডারে কমিশন নিয়ে প্রকৃতপক্ষে প্রতিষ্ঠানটি অসহায় রোহিঙ্গাদের টাকা তসরুপ করেছে। এছাড়াও নিজস্ব কর্মীদের বেতন কেটে রাখার বিষয়টিও উল্লেখ আছে ইপসার বিরুদ্ধে ঐ অভিযোগপত্রে।
এসব অভিযোগ মুলত প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নিবার্হী মো. আরিফুর রহমান ও অর্থ পরিচালক পলাশ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়েছে, আর্ন্তজাতিক দাতা সংস্থা সেভ দ্যা চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল এর দেওয়া টাকা খরচের সময় বড় রকমের অনিয়ম ধরা পড়ে। সেভ দ্যা চিলড্রেনের দেওয়া প্রায় ৫০ লাখ টাকার হিসেব মেলাতে না পেরে কর্তৃপক্ষকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করতে চেয়েছিল ইপসা। একইভাবে আরো কয়েকটি দাতা সংস্থার দেওয়া অর্থ-সহায়তার টাকার হিসাবও মেলাতে পারেনি ইপসা। এসব দাতা সংস্থার পক্ষ থেকে করা অডিটে বিষয়টি ধরা পড়ে। ইপসার পক্ষ থেকে পরে এসব দাতা সংস্থাকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানত চাইলে ইপসার প্রধান র্নিবাহী আরিফুর রহমান প্রকৌশল নিউজকে বলেন, আগে ইপসাতে কাজ করা মাহাবুবর রহমান আমাদের প্রতিষ্ঠানকে হেয় করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় এই অভিযোগগুলো দিয়েছেন। বিদ্বেসপ্রসূত হয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানকে হয়রানী করার জন্য তিনি এসব করেছেন। এসব অভিযোগ সত্য নয়।
সেফ দ্যা চিলড্রেনের অনিয়ম সম্পর্কে তিনি বলেন, সেফ দ্যা চিলড্রেনের যে একটা ঘটনা ছিল সেটা তো অনেক আগের। আমাদের ভ্যাট নিয়ে একটা সমস্যা ছিল। অর্থাৎ, আমরা বেশি ভ্যাট সরকারকে দিয়েছিলাম যা সেভ দ্যা চিলড্রেন মানে নাই। ওই ইশ্যুটাকেই উনি এভাবে হাইলাইট করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে সেভ দ্যা চিলড্রেনে সেই সময়ে কাজ করা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে প্রকৌশল নিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
এনজিওদের নজরদারী প্রতিষ্ঠান ‘এনজিও বিষয়ক ব্যুরো’ বিষয়টি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে থেকে বলা হয়েছে, অনিয়ম করলে কোন এনজিও ছাড় পাবেনা। সংস্থাটির মহাপরিচালক রাশেদুল ইসলাম প্রকৌশল নিউজকে বলেন, কোন এনজিও এর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আসলে আমরা অবশ্যই তা তদন্ত করবো। তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি) মনে করে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে কাজ করা দেশি ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর ব্যয়ের হিসাবের ‘স্বচ্ছতার অভাব’ রয়েছে । টিআইবি’র এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার কাজে থাকা এনজিওগুলো নিজেদের পরিচালন ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ করতে চায় না। যে হিসাব তারা দেয়, প্রকৃত ব্যয় তার চেয়ে বেশি।
আগামী পর্বে থাকবে : কি অভিনব কৌশলে টাকা উত্তোলন করে ইপসা!