হাজী মুসা ম্যানসনের মালিক ও গোডাউন মালিকের বিরুদ্ধে মামলা
রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলার হাজী মুসা ম্যানসনে ক্যামিকেল গোডাউনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহত হয়েছেন চার জন, আর দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২০ জন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে হাজী মুসা ম্যানসন ভবনের মালিক ও ক্যামিকেল গোডাউনের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে ডিএমপির বংশাল থানায় মামলা হয়। মামলা নম্বর-৩৫।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন ফকির।
তিনি বলেন, অগ্নিকান্ডে নিহত ও আহতদের পরিবারকে পুলিশ মামলা করতে বললেও তারা মামলায় অনাগ্রহ প্রকাশ করে। তাদের নিকট আত্মীয়-স্বজনেরাও মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। যেহেতু ঘটনায় চারজন নিহত ও ঘটনাটি আলোড়ন সৃষ্টি করায় পুলিশ বাদী হয়ে রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে মামলা করে। মামলায় আরমানিটোলার হাজী মুসা ম্যানসনের মালিক ও ক্যামিকেল গোডাউনের মালিককে আসামি করা হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু, ব্যক্তিগত নিরাপত্তাক্ষুণ্ণ ও দাহ্য পদার্থ রাখার কারণে মামলাটি করা হয়। আবাসিক ভবনে ক্যামিকেল রাখার ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হয়েছে।
এদিকে, হাজী মুসা ম্যানসন পরিদর্শন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা। তারা ঘটনাস্থলে আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখে। পরিদর্শন শেষে সংস্থাটি জানায়, আগুনের সূত্রপাত কেমিক্যাল গোডাউন থেকে হতে পারে।
পিবিআই অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, হাজী মুসা ম্যানসনের নিচ তলায় অনেকগুলো কেমিক্যালের দোকান রয়েছে। এসব দোকানে কেমিক্যাল বিক্রি হত। সেই কেমিক্যাল থেকেই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। ভবনের নিচতলায় পেছনের দিকে বেশ কয়েকটি দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তন্ময় প্রকাশ ঘোষ দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় ছয়তলা ভবনে কেমিক্যাল গোডাউনে লাগা আগুনে দগ্ধ ২১ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউতে আছেন। বাকি ১৬ জন বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি।
চিকিৎসাধীনদের মধ্যে মোস্তফা নামে একজন চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন। ভর্তি ২০ জনের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। এদের মধ্যে দুজনের ফিজিক্যাল বার্ন।
আহতরা হলেন- ইব্রাহিম সরকার (৬০), তার স্ত্রী সুফিয়া সরকার (৫০), তাদের ছেলে জুনায়েদ সরকার (২০), বড় মেয়ে ইসরাত জাহান মুনা (৩০), তার স্বামী আশিকুর রহমান (৩৩), মোস্তফা (৪০), ইউনুস মোল্লা (৬০), সাকিব হোসেন (৩০), সাখাওয়াত হোসেন (২৭), সাফায়েত হোসেন (৩৫), চাষমেরা বেগম (৩৩), দেলোয়ার হোসেন (৫৮), আয়সাপা (২), খোরশেদ আলম (৫০), লায়লা বেগম (৫৫), মোহাম্মদ ফারুক (৫৫), মেহেরুন্নেসা (৫০), মিলি (২২), পাবিহা (২৬),আকাশ (২২) ও আসমা সিদ্দিকা (৪৫)।
চিকিৎসক তন্ময় প্রকাশ ঘোষ বলেন, আমাদের এখানে ২১ জন চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এদের মধ্যে ২০ জনের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। আশিকুর, ইসরাত জাহান মুনা, সাফায়েত হোসেন ও খোরশেদ আলম আইসিইউতে ভর্তি আছেন। মোস্তফা নামের একজন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। ভর্তি ২০ জনের ১৫-২২ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। বাকি ১৬ জন বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান এই চিকিৎসক।
এ ঘটনায় চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা হলেন- ওই ভবনের নিরাপত্তারক্ষী অলিউল্লাহ, দোকান কর্মচারী রাসেল মিয়া, ভবনের চারতলার বাসিন্দা ইডেন মহিলা কলেজে ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া এবং অলিউল্লাহর কাছে বেড়াতে আসা কবীর নামে আরেকজন।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিকে হাজী মুসা ম্যানশন নামের ওই ভবনটির নিচতলায় আগুন লাগে। সকাল ৯টার পর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট প্রায় ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।