ওয়াসা বাড়িয়েই যাচ্ছে স্যুয়ারেজ ও পানির বিল

বিগত এক যুগ ধরে ঢাকা ওয়াসা প্রতি বছরই বাড়িয়ে যাচ্ছে স্যুয়ারেজ ও পানির বিল। ২০২০ সালের মার্চ মাসে ঢাকা ওয়াসা এক ধাপে পানির দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়িয়েছিল। এবার আবারো একই উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। ইতোমধ্যে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্যুয়ারেজ ও পানির বিল বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।

ওয়াসা বাড়িয়েই যাচ্ছে স্যুয়ারেজ ও পানির বিল

বিগত এক যুগ ধরে ঢাকা ওয়াসা প্রতি বছরই বাড়িয়ে যাচ্ছে স্যুয়ারেজ ও পানির বিল। ২০২০ সালের মার্চ মাসে ঢাকা ওয়াসা এক ধাপে পানির দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়িয়েছিল। এবার আবারো একই উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্যুয়ারেজ ও পানির বিল বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। 

এরফলে আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে পানির বর্ধিত মূল্য। এই দাম কার্যকর হলে ওয়াসার পক্ষ থেকে গত ১৩ বছরে ১৪ বার পানির দাম বাড়ানোর ঘটনা ঘটবে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, এখানে অস্বচ্ছতা বা নিয়ম লঙ্ঘনের কিছু যুক্ত নেই। কারণ মুদ্রাম্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করতে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে পানির দাম ও স্যুয়ারেজের ব্যবস্থাপনার মূল্য বাড়ানোর ম্যান্ডেট রয়েছে ঢাকা ওয়াসার। যার ভিত্তিতেই ঢাকা ওয়াসা এবারো স্যুয়ারেজ ও পানির বিল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত বছর আবাসিক সংযোগে প্রতি এক হাজার লিটার পানির মূল্য ছিল ১১ টাকা ৫৭ পয়সা। ঢাকা ওয়াসা তা বাড়িয়ে ২০ টাকা ও বাণিজ্যিক ও শিল্পে প্রতি হাজার লিটার পানির মূল্য ৩৭ টাকা ৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করার উদ্যোগ নিয়েছিল। যদিও পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন করেনি। মন্ত্রণালয় আবাসিকে ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা এবং বাণিজ্যিক ও শিল্পে ৪০ টাকা প্রতি হাজার লিটার পানির দাম নির্ধারণের পক্ষে মত দেয়। ২০২০ সালের ১ মার্চ থেকে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ওয়াসা। একই হারে বাড়ানো হয় স্যুয়ারেজের বিলও।

গ্রাহকদের অভিযোগ রয়েছে সারা বছরই রাজধানীর কোথাও না কোথাও পানির সঙ্কট লেগেই থাকে। আবার পানি পেলেও মান অতি খারাপ। কিন্তু ওয়াসার দাবি, সংস্থাটি সুপেয় ও নিরাপদ পানি সরবরাহ করে থাকে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে ওয়াসা যে আইনের অজুহাত দেয় তা খোঁড়া যুক্তি। তাদের সার্ভিস বা সেবার মানের কোনো উন্নতিই হয়নি যে দাম বাড়ানো হবে। বরং পানির মান ও সরবরাহ নিয়ে ওয়াসার আওতাধীন এলাকায় মানুষের বিস্তর অভিযোগ আছে। অনেকেই ঠিকমতো পানি পায় না। পেলেও সেটির মান একেবারেই খারাপ। ওয়াসা স্যুয়ারেজের বিলও নেয়। অথচ তারা স্যুয়ারেজের ব্যবস্থাপনা করে না। বলতে গেলে ওয়াসা একটা অত্যাচারী ও জবরদস্তিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই সুযোগে ওয়াসা যা খুশি তাই করে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার এক কর্মকর্তা জানায়, গত ১১ মার্চ ঢাকা ওয়াসার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা পানি ও স্যুয়ারেজের বিল আগামী ১ জুলাই থেকে ৫ শতাংশ হারে বাড়ানোর প্রস্তাবপত্র তৈরি করে তা বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপকের কাছে পাঠায়। আর বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক সেদিনই তার অনুমোদন দেয়। ওই অনুমোদনের পর ওই দিনই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে ওই ফাইল পাঠানো হয়। তিনিও সেদিনই প্রস্তাবপত্রে স্বাক্ষর করেন। গত ১৪ মার্চ প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবটি বোর্ড সচিবের কাছে পাঠায় এবং আগামী বোর্ডসভায় উপস্থাপন ও অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে।

তিনি আরও জানান, ঢাকা ওয়াসার পানি ও স্যুয়ারেজ বিল বাড়ানো সংক্রান্ত নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বর্তমানে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি হাজার লিটার পানির মূল্য ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা। ৫ শতাংশ মূল্য বাড়ানো হলে দাম হবে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। আর বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে প্রতি হাজার লিটার পানির বর্তমান মূল্য ৪০ টাকা। তা বেড়ে হবে ৪২ টাকা। একই হারে বাড়বে স্যুয়ারেজের বিলও।

এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানায়, ওয়াসা আইন ১৯৯৬-এর ২২ ধারা অনুযায়ী ওয়াসা বোর্ড প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে পানি ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা দাম বাড়াতে পারে। পানির প্রকৃত উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের সামঞ্জস্য রাখতে এবং বর্তমান মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করতে দাম বাড়ানো হচ্ছে। সবকিছু বিচার-বিবেচনা করে ও আইন মেনেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রতি এক হাজার লিটার পানি উৎপাদনে অন্তত ১৭ টাকা খরচ হয়।

প্রকৌশল নিউজ/এমআর