কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের সুফল পাওয়া যাচ্ছে : কৃষিমন্ত্রী

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে নিরলস কাজ করছে।

কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের সুফল পাওয়া যাচ্ছে : কৃষিমন্ত্রী

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে নিরলস কাজ করছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নেয়া হয়েছে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার প্রকল্প। পাশাপাশি কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ত্বরান্বিত করতে দক্ষ জনবল তৈরিতে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কৃষি প্রকৌশলীর ২৮৪টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকে যাচ্ছে ও যান্ত্রিকীকরণের সুফল পাওয়া যাচ্ছে। এ বছরে বোরোতে ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার, রিপার বেশি ব্যবহৃত হওয়ায় দ্রুততার সাথে সফলভাবে ধান ঘরে তোলা সম্ভব হয়েছে।

সোমবার রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) মিলনায়তনে 'সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের’ জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে অঞ্চলভেদে ৫০%- ৭০% ভর্তুকিতে কৃষকদেরকে কৃষিযন্ত্র দেয়া হচ্ছে। এটি সারা বিশ্বের একটি বিরল ঘটনা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষিতে নতুন অধ্যায় সূচিত হলো। এর মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে সময় ও শ্রম খরচ কমবে। কৃষক লাভবান হবে। বাংলাদেশের কৃষিও শিল্পোন্নত দেশের কৃষির মতো উন্নত ও আধুনিক হবে।

কৃষিযন্ত্রের প্রাপ্তি, ক্রয়, ব্যবহার ও মেরামত সহজতর করতে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে স্থানীয়ভাবে কৃষিযন্ত্র তৈরি করতে চাই। বর্তমানে বেশির ভাগ যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তা আমরা কমিয়ে আনতে চাই। ইতিমধ্যে আমরা ইয়ানমার, টাটাসহ অনেক কোম্পানির  সাথে কথা বলেছি, তাদেরকে অনুরোধ করেছি যাতে তারা বাংলাদেশে কৃষিযন্ত্র তৈরির কারখানা স্থাপন করে। তিনি বলেন, যন্ত্র সরবরাহকারীদেরকে যন্ত্রের  মেইনটেন্যান্সে সহায়তা ও বিক্রয়োত্তর সেবা দিতে হবে। এছাড়া, কৃষকদের জন্য  প্রশিক্ষণে জোর দেয়া হচ্ছে- যাতে তারা নিজেরাই  যন্ত্র চালনা ও মেরামত করতে পারে।

এ সময় কৃষিযন্ত্র প্রস্তুতকারী, নির্মাতা ও আমদানিকারকদের দেশে কৃষিযন্ত্র তৈরিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মন্ত্রী। ভর্তুকি পাওয়ার পরও যাতে কৃষক কৃষিযন্ত্র কিনতে পারে, সেজন্য কৃষককে ঋণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছেও বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষক লাভবান হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। একই সাথে, ফসলের নিবিড়তা বাড়বে ও সমলয়ে চাষ ত্বরান্বিত হবে।  সময় বাঁচার ফলে  আলাদা একটা ফসল করা যাবে। এর ফলে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। কৃষি দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে ও কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়বে। কৃষির ওপর ভিত্তি করে উন্নত বাংলাদেশ হবে।

উল্লেখ্য, ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫২ হাজার কৃষি যন্ত্রপাতি সারাদেশে ৫০% ও হাওর-উপকূলীয় এলাকায় ৭০% ভর্তুকিতে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে। চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরে এ প্রকল্পের অধীনে বরাদ্দপ্রাপ্ত ২০৮ কোটি টাকার মাধ্যমে সারা দেশে ১৭৬২টি কম্বাইন হারভেস্টার, ৩৭৯টি রিপার, ৩৪টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টারসহ প্রায় ২ হাজার ৩০০টি বিভিন্ন ধরণের কৃষিযন্ত্র কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে এ প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৬৮০ কোটি টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহর সভাপতিত্বে কর্মশালায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো: হাসানুজ্জামান কল্লোল, অতিরিক্ত সচিব ওয়াহিদা আক্তার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো: হামিদুর রহমান, বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মো. বখতিয়ার, ব্রির মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক বেনজীর আলম। এসময়, কৃষিযন্ত্র প্রস্তুতকারী-সরবরাহকারীদের প্রতিনিধিবৃন্দ, সুবিধাভোগী কৃষক এবং সারা দেশের প্রায় ৫ শতাধিক কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি প্রকৌশলী ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন।