দুদকের বিদায়ী চেয়ারম্যান কতজনকে অব্যাহতি দিয়েছেন, জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ শেষ পাঁচ মাসে কতজনকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন তার তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ শেষ পাঁচ মাসে কতজনকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন তার তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে দুটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আসার পর আজ মঙ্গলবার নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। এ ছাড়া গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির ডকুমেন্ট আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।
গত রোববার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদায়ের আগে দুর্নীতির বহু রাঘব বোয়ালকে ছেড়ে দেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তাদের দায়মুক্তি আড়াল করতে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন কিছু নিরীহ ও দুর্বল ব্যক্তিকে। সব মিলিয়ে শেষ পাঁচ মাসে তিনি দুই শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি (দায়মুক্তি) দেন।
প্রকাশিত প্রতিবদনে বলা হয়, ইকবাল মাহমুদ বিদায় নেওয়ার আগে স্বীয় কৃতকর্মের অনেক দালিলিক প্রমাণই যথাসম্ভব ‘নিশ্চিহ্ন’ করে যান। এর পরও এ প্রতিবেদকের হস্তগত হয় বেশকিছু নথি। সে অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই শতাধিক দুর্নীতির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।
দুদকসূত্রে জানাযায়, ইকবাল মাহমুদ বিদায় নেওয়ার আগে যাদের দায়মুক্তি দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে, বহুল আলোচিত কাস্টমস কমিশনার নূরুল ইসলাম, সিভিল এভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী শুধেন্দু গোস্বামী, পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লি: ও তৎকালিন পরিচালক ও চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম হোসেন, বাপেক্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (তিতাসের সাবেক এমডি) নওশাদুল ইসলাম, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরুল হুদা, এলজিইডি’র সাবেক প্রধান প্রকৌশলী খলিলুর রহমান, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. কফিলউদ্দিন, প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন,’ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে এলজিইডি’র প্রকল্প, দুদক উপ-পরিচালক আব্দুছ ছাত্তার সরকার, জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী নূরুল কবীর ভুইয়া, সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম আজাদ খান, রাজউকের নির্বাহী প্রকৌশলী ছাইদুর রহমান, একই প্রতিষ্ঠানের মো. সিরাজুল ইসলাম, সওজ’ নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার শরীফ খান, ঢাকা ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো.নূরুল ইসলাম, সাউথ-ইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.হারুনুর রশীদ, ডি বিল্ডার্স অ্যান্ড প্রপার্টিজ লি: এর মালিক মো. সরোয়ার খালেদ, প্রাণি সম্পদ অধিদফতরের প্রকল্প পরিচালক ডা. মো. বেলাল হোসেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ার, কাস্টমস কমিশনার (রাজস্ব) ড. মো.সহিদুল ইসলাম, উপ-প্রধান বন সংরক্ষক মো.শফিউল আলম চৌধুরী, বিডিবিএল এর এমডি মঞ্জুর আহমেদ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, গোয়াইনঘাটের সাব-রেজিস্ট্রার স্বপ্না বেগম, স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো.নাছির উদ্দিন, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ক্যাশিয়ার মো. দেলোয়ার হোসেন, বিয়ানী বাজার উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান খান, গণপূর্তের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা একেএম মজিবুর রহমান, যুগ্ম-সচিব মো.আবুল হাসনাত হুমায়ুন কবীর, পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহবুবুল আলম ভুইয়া, পুলিশ ইন্সপেক্টর সাইদুর রহমান, সিটি ব্যাংকের ডিএমডি মো. ওয়াদুদ, আশুলিয়ার সাব-রেজিস্ট্রার গাজী মো. আবদুল করিম, চট্টগ্রাম সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ডকীপার বাবু ভজন বৈদ্য, বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানি লি: এর ম্যানেজার (নাম নেই), বিআরটিএ, ঢাকার সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি) মো. শামসুল কবির, একই অফিসের মোটরযান পরিদর্শক মো. রিয়াজুল ইসলাম, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো.নজরুল ইসলাম।
পদ্মা অয়েল কোম্পানি লি: সহ কয়েকটি রিফাইনারি কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্রুড অয়েল তেল রিফাইন না করে সরাসরি কনডেনসেট করে বিক্রির মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি এবং আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। এটি অনুসন্ধান করেন পরিচালক (বর্তমানে বদলি) কাজী শফিকুল আলম। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল খায়েরকেও অব্যাহতি দেয়া হয় পৃথক অনুসন্ধানের মাধ্যমে। এটি অনুসন্ধান করেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক। গত ১৯ নভেম্বর অনুসন্ধানটি ‘নথিভুক্তি’র নথিতে স্বাক্ষর করেন মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের রক্ষণাবেক্ষণ, অবকাঠামো নির্মাণ, ক্রয় এবং তহবিল ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ছিল। এ দুর্নীতির সঙ্গে বেবিচকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম মাকসুদুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুল ইসলাম, মো. শহীদুজ্জামান, মো. মোকাব্বর আলী ও উপসহকারী প্রকৌশলী কাজী বায়েজিদ আহমেদ।