বায়ু দূষণে বিশ্বে বাংলাদেশ ২য়
বায়ু দূষণ শুধু স্বাস্থ্যঝুকির কারণ নয় তা পরিবেশ ও অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা দেখা গেছে, বিগত ১১ মাসের বায়ুমান সূচকে বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক দূষণের মাত্রায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় এবং ঢাকা নগরী চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে
বায়ু দূষণ শুধু স্বাস্থ্যঝুকির কারণ নয় তা পরিবেশ ও অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা দেখা গেছে, বিগত ১১ মাসের বায়ুমান সূচকে বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক দূষণের মাত্রায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় এবং ঢাকা নগরী চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) তাদের গবেষণায় এমনটি জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে 'বাংলাদেশে বায়ু দূষণ: অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত উৎস আলোচিত হয়েছে । বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুদূষণ শুধু স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নয়, এটি অর্থনৈতিক এবং ইকোসিস্টেমের ঝুঁকিরও কারণ হিসেবে উঠে আসে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. আবু জাফর মাহমুদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট শাখা) ড. আবদুল মোতালিব, নিপসমের পেশাগত ও পরিবেশগত স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাফিউর রহমান, সংস্থাটির মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন ও নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানাসহ অন্যান্য সদস্যরা। তারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
গবেষণায় দেখা যায়, বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে বায়ুদূষণ রোধ করা সম্ভব। এই গবেষণাটি করা হয়েছে বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন দেশের বায়ুদূষণের তুলনামূলক মুল্যায়নের মাধ্যমে বায়ুদূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের দিক সমূহ।
গবেষণায় আরো বলা হয় যে, বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে বায়ুদূষণ রোধ করা সম্ভব। এই গবেষণাটি করা হয়েছে বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন দেশের বায়ুদূষণের তুলনামূলক মুল্যায়নের মাধ্যমে বায়ু দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের দিক সমূহ।
এই গবেষণায় শহর এবং গ্রামীণ অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক বায়ু দূষণের দিক সমূহ আলোচনা করা হয়েছে। বাহ্যিক বায়ু দূষণের কারন হল, নির্মাণ কার্যক্রম (৩৮%), প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানো (২২%), শিল্প প্রক্রিয়াজাতকরণ (১৭%), ইটভাটা (১০%), জীবাশ্ম জ্বালানী দহন, সড়ক পরিবহন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ৮%। তাছাড়াও অভ্যন্তরীণ কারনগুলো হল রান্নার চুলা থেকে নিঃসৃত ধোয়া ৪১%, সিগারেট থেকে নিঃসৃত ধোয়া ২৫%, নর্দমা নিষ্কাশন ১৫%, রেডন গ্যাস ও অন্যান্য দূষণকারী পদার্থ ১০%।
এসডোর পর্যালোচনা থেকে জানা যায়, মৌসুম পরিবর্তন ও বাতাসের আন্তসীমান্ত গতিশীলতা বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। এটি বাংলাদেশের মত ছোট দেশের জন্য হুমকিস্বরুপ কারণ বাংলাদেশ ভারত ও নেপালের সীমান্ত দ্বারা বেষ্টিত। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত জুড়ে দক্ষিণ এশিয়া হতে দূষিত বায়ু ঢাকাতে পরিবাহিত হয়। শীতকালে (নভেম্বর -জানুয়ারি) উত্তর-পশ্চিম বায়ুর প্রভাবে দূষিত পার্টিকুলেট ম্যাটারের পরিমান বেড়ে যায়। কিন্তু বর্ষাকালের আগে বাতাসে দূষিত বায়ুর প্রভাব থাকে মিশ্র ( ফেব্রুয়ারী-এপ্রিল)। উচ্চতার প্রভাবে বাতাসে দূষিত কণা প্রতি কিলোমিটারে ২০০-৫০০ কিমি প্রবাহিত হতে পারে। শীতকালে আন্তসীমান্ত গতিশীলতার বাতাসে দূষিত বায়ুকণার প্রভাব সর্বোচ্চ থাকে যা বাংলাদেশে ইন্ডিয়ান বেল্টের কারণে উত্তরদিকে প্রবাহিত হয়ে ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ সীমান্ত পর্যন্ত পৌছায়।
ধারণা করা হচ্ছে ২০২০ সাল নাগাদ শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং দীর্ঘসময় ধরে দূষিত বায়ুর সংস্পর্শে থাকার কারণে প্রায় ২ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার, বিকলাঙ্গতা, শ্বাসযন্ত্রের দুর্বলতা জনিত কারণে মৃত্যু, স্ট্রোক, ফুসফুস ক্যান্সার, ডায়াবেটিস সহ নিউমোনিয়ার মত ছোঁয়াচে রোগের কারণও বায়ু দূষণ।
গত পাঁচ বছরে (২০১৫- ২০১৯) সার্বিকভাবে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা প্রায় ২৪ গুণ বেড়ে ৩৩২৬ জন (২০১৫) থেকে ৭৮৮০৬ জনে (২০১৯) দাঁড়িয়েছে, যেখানে মৃত্যুর সংখ্যা ১০ গুণ বেড়ে ৫৬ জন থেকে ৫৮৮ জনে উপনীত হয়েছে। এর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসজনিত রোগীর সংখ্যা ২০১৫ সালে ১৬১০ জন থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে ৭৮৮০৬ জনে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৫ সালের তুলনায় প্রায় ৪৯ গুণ বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্যমতে এই সময়ে মৃত্যু সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ।
এসডোর আয়োজিত এই গবেষণা ও সংবাদ সম্মেলনের এর মূল উদ্দেশ্য বায়ু দূষণের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরা।