মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলেন মুরাদ হাসান

ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে নিজ মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেওয়ায় তাকে মঙ্গলবারের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর পদত্যাগ করলেন তিনি।

মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলেন মুরাদ হাসান

ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে নিজ মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেওয়ায় তাকে মঙ্গলবারের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর পদত্যাগ করলেন তিনি।

মঙ্গলবার (০৭ ডিসেম্বর) সচিবালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ডা. মুরাদ হাসানের আপত্তিকর বক্তব্য ও অডিও-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় আজকের মধ্যে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  সোমবার এ নির্দেশনার পরই পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন মুরাদ।

মঙ্গলবার দুপুরে সাড়ে ১২টায় পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে পাঠান প্রতিমন্ত্রী মুরাদ।  তিনি নিজে সচিবালয়ে আসেননি।  বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন।  সোমবার অডিও ফাঁস হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে ঢাকা ছাড়েন মুরাদ। 

সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘প্রধানমন্ত্রী যেকোনো সময় কোনো মন্ত্রীকে পদত্যাগ করিতে অনুরোধ করিতে পারিবেন এবং উক্ত মন্ত্রী অনুরূপ অনুরোধ পালনে অসমর্থ হইলে তিনি রাষ্ট্রপতিকে উক্ত মন্ত্রীর নিয়োগের অবসান ঘটাইবার পরামর্শ দান করিতে পারিবেন।’

সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, মন্ত্রিত্ব হারানোর পাশাপাশি দল থেকেও বাদ দেওয়া হতে পারে মুরাদ হাসানকে।

২০১৯ সালের মে মাসে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে মুরাদ হাসানকে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।  মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য।  তার বাবা প্রয়াত মতিউর রহমান তালুকদার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।

বেশ কিছু দিন ধরে বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্য এবং কর্মকাণ্ডের কারণে মুরাদ সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিমন্ত্রীর কিছু অডিও-ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় দেশজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইছে।

এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে না পারলেও সারা দেশে দলের নেতাকর্মীরা তার ওপর বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধ।   এ ঘটনায় বিএনপিসহ বিভিন্ন নারী সংগঠনও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা ডা. মুরাদের পদত্যাগ দাবি করেন।

বিএনপির এক শীর্ষ নেতার পরিবারকে নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের পাশাপাশি চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে মুরাদ হাসানের টেলিফোনে কথোপকথনের একটি অডিও ভাইরাল হয়।

এদিকে ডা. মুরাদের অডিও ভাইরালের সত্যতা স্বীকার করেছেন মাহিয়া মাহি।  সোমবার সৌদি আরব থেকে ফেসবুক লাইভে মাহি বলেন, ঘটনাটি দুই বছর আগের।

সেই সময়ে তার বিকৃত এবং কুরুচিপূর্ণ ব্যবহার ও ভাষার জবাব আমার জানা ছিল না। 

সূত্র জানায়, গত অক্টোবরে প্রথম রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরোধিতা করে আলোচনায় আসেন মুরাদ হাসান। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।

এ ঘটনার পর পর প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদের পুরনো কিছু ভিডিও ভাইরাল হয় নেট মাধ্যমে।  জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ অনেক রাজনীতিকও এর নিন্দা জানিয়েছিলেন। 

তখন থেকেই একের পর এক বিকৃত অশালীন বক্তব্য, প্রতিহিংসামূলক আক্রমণাত্মক অঙ্গভঙ্গি সব মিলিয়ে ভাইরাল হয়ে আলোচনায় ছিলেন ডা. মুরাদ হাসান। গত শনিবার একটি টিভি টকশোতে উপস্থিত বিএনপির সাবেক এক নারী এমপিকে ‘মানসিক রোগী’ বলে অভিহিত করে তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হন তিনি।

পেশায় চিকিৎসক জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসান আওয়ামী লীগপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সরকারে প্রথমে মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ২০১৯ সালের মে মাসে স্বাস্থ্য থেকে তাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

জানা গেছে, চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার ঘটনায় যখন চারদিকে সমালোচনা শুরু হয়, তখনই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান চট্টগ্রামের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা একটি গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সোমবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরেই চট্টগ্রামের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন মুরাদ। চট্টগ্রামে এক বন্ধুর বাসায় ওঠার কথা রয়েছে তার।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া জীবনবৃত্তান্ত অনুযায়ী, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ২০০০ সালে ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সভাপতি হন মুরাদ হাসান। তিন বছর পর আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পান।

৪৭ বছর বয়সি মুরাদ তার নিজের এলাকা জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের ‘স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক’। তার বাবা অ্যাডভোকেট মতিয়র রহমান তালুকদার ছিলেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

এদিকে ডা. মুরাদ হাসানের ‘অপ্রত্যাশিত ফোনালাপে’ বিব্রত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় দুই নেতা বলেন, একজন রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব হচ্ছে দেশের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে মানুষের জন্য কাজ করা। মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দায়িত্ব পালন করা। কিন্তু নিজের ব্যক্তিত্ব ও অবস্থান বিসর্জন দিয়ে কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ করলে শুধু সেই ব্যক্তিই যে সমালোচিত হন তা নয়, তার দল ও দলের নেতারাও বিব্রত হন।

তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালদো জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান, নাতনি জায়মা রহমান সম্পর্কে অত্যন্ত অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন যা নারী বিদ্বেষী, বর্ণবাদী, বিকৃতরুচি সম্পন্ন ও যৌন হয়রানিমূলক। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে তথ্যপ্রতিমন্ত্রী। এর জেরে ডা. মো. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।