সাহসিকতার সঙ্গে ন্যায়বিচার করুন: ইমাম খামেনেয়ী
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, যে কারো ব্যাপারে কোনো বিশেষ বিবেচনা ছাড়াই সাহসিকতার সঙ্গে ন্যায়বিচারের প্রয়োগই বিচার বিভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
তিনি আজ (শনিবার) ভোরে ইসলামী ইরানের বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের দেয়া এক সাক্ষাতে এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেছেন, ন্যায়বিচারের আলোকে নানা সমস্যা ও বিরোধের সমাধান করা এবং আইনের লাল-সীমানার লঙ্ঘন ঠেকানো বিচার বিভাগের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এই সাক্ষাতের প্রথমে ইরানের সাবেক বিচারবিভাগ প্রধান শহীদ আয়াতুল্লাহ বেহেশতি ও সাবেক বিচারবিভাগ প্রধান (ও সাবেক প্রেসিডেন্ট) শহীদ সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসিসহ বিচার বিভাগের শহীদ কর্মকর্তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং বিচার বিভাগের প্রধানসহ এই বিভাগের কর্মকর্তা, বিচারপতি ও কর্মীদের পরিশ্রমের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।
ইমাম খামেনেয়ী বলেছেন, পবিত্র কুরআন ও অন্যান্য ইসলামী সূত্রগুলো ন্যায়বিচারের ওপর যত বেশি জোর দিয়েছে তেমন ব্যাপক ও বেশি গুরুত্ব খুব কমই দিয়েছে অন্য কোনো বিষয়ে।
তিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সাহসিকতার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, ইমাম সাজ্জাদ (আ) তথা ইমাম যাইনুল আবেদিনের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী বিচারবিভাগের আচরণ এমন হওয়া উচিত যে শত্রুরাও যেন জুলুম ও বলদর্পিতার হাত থেকে নিজেদের মুক্ত মনে করে এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাও অন্যায্য পক্ষপাতিত্বের ব্যাপারে হতাশ হয়ে থাকে; বিচারবিভাগ যদি এমনই হয় তাহলে জনগণ 'আত্মিক ও মানসিক নিরাপত্তা' অর্জন করবে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বিভিন্ন মামলার তদন্তে কম সময় নেয়া এবং প্রাথমিক আদালতের রায়ের প্রয়োগ, যা আপিল প্রক্রিয়ায় রায়ের লঙ্ঘন হ্রাসের দিকে পরিচালিত করে, তদন্ত সংস্থার কাছে মামলা বা অভিযোগ ও রিপোর্ট কমে যাওয়া- এসবই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সূচক যার উন্নতি হওয়া উচিত বিচারবিভাগীয় সনদগুলো বাস্তবায়নের ধারায়।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা গ্রেফতারের মামলাগুলোর তদন্তে ধীর গতি ও এর পরিণতিতে অস্থায়ী গ্রেফতারের সময় খুব দীর্ঘ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে নিজের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে বলেছেন, এ ধরনের ব্যক্তিদের অবস্থা আরও দ্রুত স্পষ্ট করা উচিত যাতে তদন্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ার কারণে কেউ কারাগারের কঠোরতার শিকার না হয়।
তিনি দেনার দায়ে আটক ব্যক্তিদের সমস্যা ঝুলে থাকার বিষয়ে বলেছেন, কোনো কোনো ব্যক্তির অবস্থা এমন যে সারা জীবন কারাগারে থাকলেও দেনা শোধ করার সাধ্য তাদের নেই, আর এই সমস্যার অবশ্যই সমাধান হওয়া উচিত।
পশ্চিমা মানবাধিকারের রীতি অনুযায়ী বিচারের পরিবর্তে দেশীয় আইন অনুযায়ী বিচার করা, বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে সরাসরি উপস্থিত হয়ে বিচার সংক্রান্ত ময়দানের পরিস্থিতি দেখা ও এইসব সাক্ষাতে গৃহীত আশা-সঞ্চারক সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে লেগে থাকার ওপর জোর দেয়ার বিষয়গুলো ছিল ইরানের সর্বোচ্চ নেতার আজকের এই বক্তব্যের আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
ইমাম খামেনেয়ী তাঁর ভাষণের উপসংহারমূলক অংশে বলেছেন: আপনারা এমনভাবে কাজ করুন যাতে জনগণ বিচারবিভাগকে ন্যায়ের ঘর ও আইন বাস্তবায়নের পক্ষপাতহীন কেন্দ্র বলে মনে করে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থীদের উদ্দেশ্যেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপদেশ দেন। তিনি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের নির্বাচন সংক্রান্ত অনুষ্ঠানমালাকে ভালো বলে মন্তব্য করেন এবং এসব অনুষ্ঠানের ফলে জনগণ বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে পরিচিত হতে পারছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন: সব প্রার্থীই ইরান ও ইসলামী জন-শাসন-ব্যবস্থাকে পছন্দ করেন, কারণ তাঁরা এই ব্যবস্থার ও জনগণের সেবা করার জন্য প্রেসিডেন্ট হতে চান। তাই তাঁদের এমনভাবে কথা বলা উচিত যাতে শত্রুরা খুশি না হয়।