হাতিরঝিলে ৩০ মিনিট, ভারতে পাচার ছাত্রী

মাত্র ৩০ মিনিট হাতিরঝিলে বেড়াতে গিয়েছিলো নবম শ্রেণির ছাত্রী, আর তাতেই সে পাচার হয়ে গেলো ভারতে। ভারতে নারী পাচারের ঘটনায় রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নবম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী ভারতে পাচার হওয়ার অভিযোগ এনে তারা বাবা বাদী হয়ে মামলাটি করেন। 

হাতিরঝিলে ৩০ মিনিট, ভারতে পাচার ছাত্রী

মাত্র ৩০ মিনিট হাতিরঝিলে বেড়াতে গিয়েছিলো নবম শ্রেণির ছাত্রী, আর তাতেই সে পাচার হয়ে গেলো ভারতে। ভারতে নারী পাচারের ঘটনায় রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নবম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী ভারতে পাচার হওয়ার অভিযোগ এনে তারা বাবা বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

টিকটক হৃদয়সহ চারজনকে মামলার আসামি করা হয়েছে। মামলায় সিএনজিচালক বাবা উল্লে­খ করেন, অজ্ঞাতনামা কয়েকজন আসামিদের সহযোগিতায় হৃদয় বাবু তার কিশোরী মেয়েকে ভারতে পাচার করে। 

ভারতে তরুণী নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে মোট ছয়টি মামলা হলো। বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হাফিজ আল ফারুক।

পাচার হওয়া ওই ছাত্রীর বাবা মামলার এজাহারে উল্লে­খ করেন, তারা ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় সিদ্দিক মাস্টারের ঢালের একটি বাসায় দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। বড় মেয়ে (১৫) বিজি প্রেস স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। করোনা মহামারির কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় সে মাঝেমাঝে তার মা ও ছোট বোনকে নিয়ে হাতিরঝিল ঘুরতে যেত। সেখানে গিয়ে মেয়ের সঙ্গে কয়েকজন ছেলেমেয়ের পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে মগবাজারের হৃদয় বাবু নামে একটি ছেলে ছিল। সে আরও কয়েকজন ছেলেমেয়েসহ টিকটক শুটিং করত। আমার স্ত্রী এসব ছেলেমেয়েদের কথা আমাকে জানালে আমি মেয়েকে তাদের সঙ্গে মিশতে নিষেধ করি। আমার মেয়ে আর মিশবে না বলে কথা দেয়।

পরবর্তী ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, গত ১৭ মার্চ বিকাল আনুমানিক ৫টার দিকে আমার মেয়ে ৩০ মিনিটের জন্য হাতিরঝিলে ঘুরতে যাবে বলে বাসা থেকে বের হয়। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সে বাসায় না ফেরায় আমি তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল করে বন্ধ পাই। রাতেও আমার মেয়ে বাসায় না ফেরায় আমরা হাতিরঝিল লেকসহ বিভিন্ন স্থানে তাকে খুঁজি। কিন্তু তাকে কোথাও পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আমাদের আত্মীয়স্বজন ও আমার মেয়ের পরিচিত বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারাও কোনো সন্ধান দিতে পারেনি। এরপর গত ২ জুন বাংলাদেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে একটি মেয়ের সাক্ষাতকার প্রচারিত হয়। যে সাক্ষাতকারে মেয়েটি জানায় তাকে ভারতে পাচার করা হয়েছিল। অমানবিক শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের পর সে ভারত থেকে পালিয়ে দেশে ফিরেছে। অজ্ঞাতনামা কয়েকজন আসামিদের সহযোগিতায় হৃদয় বাবু তাকে ভারতে পাচার করে। এ সময় সে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত যে মেয়েগুলোকে ভারতে দেখেছে তাদের নাম বলে। সেখানে আমার বড় মেয়ের নামও ছিল।

পাঁচার হওয়া ছাত্রীর বাবা বলেন, সাক্ষাতকার দেওয়া মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করে আমার মেয়ের ছবি দেখালে সে আমার মেয়েকে ব্যাঙ্গালুরু আনন্দপুরা সার্কেলের বাসায় আরও কয়েকজন মেয়েসহ দেখেছে বলে শনাক্ত করে। সে আরও জানায়- সবুজ, সাগর রুবেল রাহুলসহ আরও কয়েকজনের নেতৃত্বে এ মানব পাচার চক্রটি হৃদয় বাবুর মাধ্যমে তার মেয়েকে চাকরির প্রলোভনে ভারতে পাচার করেছে বলে সে শুনেছে।

সে আরও জানায়, রিফাদুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২৬), সবুজ (৩০), সাগর (২৭) ও রুবেলসহ (৩১) অজ্ঞাতনামা আসামিরা গত ১৭ মার্চ আমার মেয়েকে পাচারের উদ্দেশে বাংলাদেশ থেকে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর আনন্দপুরা সার্কেলে একটি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে মারপিট করে জোরপূর্বক বিভিন্ন আবাসিক হােটেল, ম্যাসাজ পার্লার ও বাসায় পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে। এখন পর্যন্ত অদ্যবধি আমার মেয়ের কোনো সন্ধান পাইনি। আসামিরা আন্তর্জাতিক পাচারকারীদের কাছে পাচার/বিক্রি করার উদ্দেশ্যে আমার মেয়েকে ফুসলিয়ে ভারতে নিয়ে যায়।

প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস