দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘ব্যাগিং পদ্ধতি’তে আদা চাষ
খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধিতে জনপ্রিয় এক মশলাজাতীয় ফসল হলো আদা। ভেষজ গুণে ভরপুর আদা কাঁচা ও শুকনো দু’ভাবেই ব্যবহার করা যায়। তাই সারা বছর ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদা থাকে তুঙ্গে। সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখে সারাদেশে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘ব্যাগিং পদ্ধতি’ অর্থাৎ বস্তায় মাটি ভরাট করে আদা চাষ। ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন এই পদ্ধতিতে আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।
খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধিতে জনপ্রিয় এক মশলাজাতীয় ফসল হলো আদা। ভেষজ গুণে ভরপুর আদা কাঁচা ও শুকনো দু’ভাবেই ব্যবহার করা যায়। তাই সারা বছর ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদা থাকে তুঙ্গে। সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখে সারাদেশে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘ব্যাগিং পদ্ধতি’ অর্থাৎ বস্তায় মাটি ভরাট করে আদা চাষ। ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন এই পদ্ধতিতে আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।
শুধু কৃষকদের মাঝেই এই আদা চাষ সীমাবদ্ধ নয় বরং বাড়ির ছাদে কিংবা আঙ্গিনায় এবং বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে ব্যাগিং পদ্ধতিতে বস্তায় মাটি ভরাট করে আদা চাষ করছেন অনেকেই।
তেমনি একজন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের নূনাছরা গ্রামের বাসিন্দা আবু তাহের। পরিবারের অভাব-অনটন দূর করতে কলেজ জীবনেই পাড়ি জমান দুবাইতে। দালালের হাতে প্রতারণার শিকার হয়ে এক বছর পর ফিরে আসেন দেশে। দেশে এসে চাকরি নেন গার্মেন্টে। যে বেতন পেতেন তাতে নিজের খরচই চলত না। সেই চাকরি ছেড়ে যুক্ত হন কৃষি কাজে। উপজেলা কৃষি অফিস এবং মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের সহযোগিতায় আধুনিক পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ও আদার চারা উৎপাদন শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি ১০০ জিও ব্যাগে আদা চাষ করেন। বাড়ির আশপাশে নিচু পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষের মাধ্যমে তিনি নতুন স্বপ্ন দেখছেন। আবু তাহের বলেন, প্রতি বস্তায় ৪ কেজি আদা উৎপাদন হবে। সামনে ১ হাজার বস্তায় আদা চাষের পরিকল্পনা তার।
অন্যজন, নওগার মোছাঃ নারগিস। তিনি বাড়ীর আঙ্গিনায় এবং বাড়ীর আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে ব্যাগিং পদ্ধতিতে বস্তায় মাটি ভরাট করে আদা লাগাতে শুরু করেছেন । নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলায় পার্টিচড়া ইউনিয়নের পার্টিআমলাই গ্রামের নারগিস নিজের শ্রমেই গড়ে তুলেছেন সাড়ে ১৪ হাজার বস্তার আদার ক্ষেত।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের(ডিএই) এর মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় তিনি ১০ শতাংশ জমিতে আদা চাষের প্রদর্শনী পাওয়া কৃষক। তিনি প্রকল্পের সহায়তায় ৫০০ বস্তায় আদা চাষ করেন। ওই প্রদর্শনী পাওয়ার পর তিনি অনুপ্রাণিত হয়ে কৃষি অফিসের মাধ্যমে পরামর্শ নিয়ে আরো অধিক আদা চাষ শুরু করেছেন। এই মৌসুমে সব মিলিয়ে মাঠে তার ১৪ হাজার বস্তা আদার আবাদ চলমান।
নারগিস বলেন, ‘অবসর সময় বসে না থেকে কৃষি বিভাগের পরামর্শে বাড়ির চারপাশে বস্তায় করে আদার গাছ লাগিয়েছি। এজন্য কৃষি বিভাগ আমাকে জানায়, প্রতিটি বস্তায় প্রায় এক কেজি করে আদা উৎপাদন হবে। ফলে আশা করছি ১৪ হাজার বস্তায় প্রায় দেড় টন আদা উৎপাদন করতে পারবো।
তিনি আরো বলেন, ‘আদা রোপণের মাত্র ৩ মাসের মাথায় গাছগুলোতে আদা আসতে শুরু করেছে। বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি দেখে এলাকার অনেক মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।’
প্রকল্প সূত্রে জানাগেছে, আদা ছায়া যুক্ত স্থানে আবাদ হওয়ার কারণে নার্গিস আম ও লিচু বাগানের পতিত জমিও বসত বাড়ির আশেপাশে ১৪ হাজার বস্তা স্থাপন করেছেন। এখানে ওই কৃষক ১৪ হাজার বস্তা থেকে ১৪ হাজার কেজির বেশি আদা উৎপাদন করতে পারবে।
বিভিন্ন এলাকার আদা চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে আদা চাষ শুরু করেন। প্রথমে ছাই, জৈব সার ও বালু মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করেন। এরপর প্রতিটি বস্তায় তিনটি করে আদার চারা রোপণ করেন। রোপণের মাত্র ১ মাসের মাথায় গাছ বড় হতে শুরু করে। এরপর মাত্র তিন মাসের মধ্যে গাছগুলোর গোড়ায় আদা ধরতে শুরু করে। সীমিত খরচ, কম জায়গা আর অল্প শ্রমে বস্তায় আদা চাষ করা যায়। আদাগাছে পানির চাহিদা অনেক কম। আবার সার বা কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় খুব কম। মাঝেমধ্যে পাতামরা রোগ প্রতিরোধে কিছু ওষুধ স্প্রে করতে হয়। এর বাহিরে তেমন কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। এভাবে আদা চাষ করে সহজেই লাভবান হওয়া যায়।
২০২৩ সালের এআইএস ও ২০২২ সালের বিবিএস এর দেওয়া তথ্য মতে, দেশে আদার চাহিদা বছরে প্রায় ৪ লাখ ৮১ হাজার মেট্রিকটন। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল মাত্র ২ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিকটন। বাকি ২ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিকটন বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। যা মোট চাহিদার ৫৩ শতাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। গত অর্থবছরে ১৬ হাজার একশ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাষযোগ্য পতিত জমি বা বসতবাড়ির আশেপাশে, ফল বাগান ও বিল্ডিং এর ছাদে জিও ব্যাগে আদা চাষ করে উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে আমদানি ব্যয় কমানো সম্ভব। জিও ব্যাগে আদা চাষ করে অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনা হয়েছে। জিও ব্যাগ পূন:ব্যবহারযোগ্য, পরিবেশবান্ধব, তাপ প্রতিরোধী, জলরোধী এবং ব্যবহারের জন্য টেকসই। এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করলে কন্দ পচাঁ রোগ হয়না, যদি রোগ দেখা যায় তখন গাছসহ বস্তা সরিয়ে ফেলা হয় ফলে কন্দপচাঁ রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা থাকেনা। এ পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক রাসেল আহমেদ বলেন, আমরা প্রকল্পের মাধ্যমে বস্তায় আদা চাষ জনপ্রিয় করার জন্য মাঠ পর্যায়ে প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করছি। এটি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ হলে দেশের আদার চাহিদার অনেকাংশ পূরুণ হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
প্রকল্পটি বাস্তাবিয়ত হলে আদার মোট উৎপাদনের সাথে ৫ শতাংশ যোগ হবে। সেই সাথে মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা আদা চাষে উৎসাহিত হবেন বলে মনে করেন তিনি।
# দেশে আদার চাহিদা প্রায় ৪ লাখ ৮১ হাজার মেট্রিকটন
# উৎপাদন হয় ২ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিকটন
# বিদেশ থেকে ২ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিকটন আমদানি
# গত অর্থবছরে আদা চাষ হয় ১৬ হাজার একশ হেক্টর জমিতে