গণপূর্ত অধিদপ্তর: পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণে অনিয়ম 

কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে পটুয়াখলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণের সময় বেড়েই চলছে। প্রথম দফা সময় বৃদ্ধির পর আগামী জুনে কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও বাস্তব অগ্রগতি আশানূরুপ নয়। সেই সাথে যোগ হয়েছে, গণপূর্তের প্রকৌশলীর সহায়তায় নির্মাণে জড়িত ঠিকাদারদের গাফিলতি ও কাজের মান ঠিকমতো না রাখাকে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গণপূর্ত অধিদপ্তর: পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণে অনিয়ম 

কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণের সময় বেড়েই চলছে। প্রথম দফা সময় বৃদ্ধির পর আগামী জুনে কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও বাস্তব অগ্রগতি আশানূরুপ নয়। সেই সাথে যোগ হয়েছে, গণপূর্তের প্রকৌশলীর সহায়তায় নির্মাণে জড়িত ঠিকাদারদের গাফিলতি ও কাজের মান ঠিক না রাখাকে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নির্মাণ কাজের অগ্রগতি নিয়ে আইএমইডি’র প্রতিবেদনে নানান অনিয়ম ও গাফিলতির বিষয় উঠে এসছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসপাতাল নির্মাণের লক্ষ্যে ১৪টি প্যাকেজে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেখানে কাজ পাওয়া ঠিকাদারদের গাফিলতির বিষয়টি প্রকট আকারে ফুটে ওঠে। ১৪ টি কাজের মধ্যে এম এম বিল্ডার্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং লি. নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান  তাদের বিভিন্ন ফার্মের মাধ্যমে জয়েন্ট ভেঞ্চারের মাধ্যমে ১৩ টি কাজ করছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্ত সেখানে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নাই বলে আইএমইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, সাইটে কাজ চলার সময় বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে কাজ তদারকি করার কথা থাকলেও থাকলেও সেখানে তাদের কাউকে রাখা হয়নাই। তবে, কখনো ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দেখা গেছে।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, এম এম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এর ১৩ টি কাজের গতি অত্যান্ত ধীর এবং তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এলাকার অপেশাদার ঠিকাদার নিয়োগ করে নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছে। সেখানে স্থানীয় গণপূর্ত অধিদপ্তর বিষয়টি পরীক্ষা করে চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চুক্তি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বললেও অজানা কারণে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ওই ঠিকাদারই কাজ চলমান রেখেছে।

এছাড়া, বিভিন্ন চুক্তি পর্যালোচনা করে তদন্ত কমিটি উল্লেখ করেছে, প্রতিটি নির্মাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে যে সব শর্ত দেয়া হয়েছে তার মধ্যে প্রজেক্ট ম্যানেজার থাকার কথা ছিলো কিন্ত সেখানে মাত্র একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীকে পাওয়া গেছে। চুক্তিরশর্ত ব্যত্যয় ঘটিয়ে শুধুমাত্র একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী নিয়ে একাধিক নির্মাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। এসব অনিয়মের জন্য ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের উপর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে কিন্ত কোন ব্যাবস্থা নেননাই সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী। এছাড়া, সেখানে সাবকন্ট্রাক্টের মাধ্যমে কাজ নেওয়া ঠিকাদাররা অদক্ষ শ্রমীক নিয়োগ করে সানাতন পদ্ধতিতে নির্মাণ কাজ করছে। অবকাঠামো নির্মাণ কাজে শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য যেসব উপকরণ থাকার কথা তার কোনটাই ব্যবহার করা হয়নাই। এছাড়া দক্ষ শ্রমীক নিয়োগ না করে অদক্ষ শ্রমীক নিয়োগ করা হয়েছে এবং তাদের কোন গ্রুপ বিমার ব্যবস্থা নাই।    

ভবন নির্মাণে কাঠামোগত নকশার তুলনায় কম রডের ব্যবহারের কথা উল্লেখ আছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, প্রশাসনিক ব্লকের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজের সময় তৃতীয় তলা কাজের বড় বাঁধাই এর সময় কাঠামোগত নকশার তুলনায় কম পরিমাণ রড ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও নকশা অনুযায়ী সঠিকভাবে ছক তৈরি না করে বিভিন্ন পিলার ও পাইলে রিং তৈরী করা হয়েছে। সেখানে স্থানীয় প্রকৌশল সংস্থার দায়িত্বে অবহেলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

চুক্তির শর্তানুযায়ী প্রকল্প এলাকায় সাইট অফিস নির্মাণের কথা থাকলেও তা পাওয়া যায় নাই। সেই সাথে সাইট অফিসে কোন প্লান বা নির্মাণ কাজের স্যাম্পল রাখার ব্যবস্থা রাখা হয় নাই। এছাড়া ওই হাসপাতালটির একাডেমিক ভবনসহ সকল ভবন নির্মাণে ব্যাবহার করা টেন্সাইল স্টেন্থ, কম্পোসিভ স্টেন্থ পাথরের সীভ ব্যবহারে নিয়মিতভাবে অ্যানালাইসিস করা হয় নাই। যা নির্মাণ বিধিমালার পরিপন্থি হিসেবে প্রতিবেদনটি উল্লেখ করা হয়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইট অর্ডার বইয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও উপ বিভাগ প্রকৌশলী বিভিন্ন নির্দেশ লিখলেও নির্বাহী প্রকৌশলীর কোন নির্দেশনা নেই। সেখানে দেদারসে চলছে অণিয়ম। ছাদ ঢালাইয়ে স্টিলের ব্যবহারের কথা থাকলেও সেখানে বাঁশ ও কাঠের ব্যবহার করে গণপূর্তের প্রকৌশলীর সামনেই সাটারিং করা হয়েছে।

নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ইটের মান আশানূরুপ নয় বলে জানিয়েছে বিল্ডিং রিসার্স ইন্সটিটিউট। তারা ৫ টি ইটের নমুনা পরীক্ষা করে উল্লেখ করেছে, যেখানে ইটের লোড নেওয়ার ক্ষমতা যথাক্রমে যেখানে দেওয়ার কথা ১৮ টন সেখানে আছে ১৪.৫৭ টন, দেওয়ার কথা ২৯.২০ টন সেখানে আছে ২৩.৬৪ টন, দেওয়ার কথা ২৮.৪০ টন সেখানে আছে ২৩.৩১ আছে টন, দেওয়ার কথা ২৯ টন সেখানে আছে ২৩.৪৮ টন, দেওয়ার কথা ১৩.২০ টন সেখানে আছে ১০.৬৯ টনের কথা উল্লেখ আছে।

সাবকন্ট্রাক্টের মাধ্যমে কাজ কারার বিষয়ে কি বলছে আইএমইডি: 
হাসপাতালটি নির্মাণে যেসকল ঠিকাদার কাজ পেয়েছেন তারা সরাসরি নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছেনা বলে আইএমএডি পরিদর্শন কর্মকতারা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। সেখানে  উল্লেখ করেছেন, ‘সিভিল কন্সট্রাকশনের চুক্তিতে উল্লেখ থাকে যে,  ‘কাজ চলা কালীন সময়ের মাঝে ঠিকাদার যদি কাজ করতে অপারগ হন কিংবা অন্য কা্উকে সাবকন্ট্রাক্টে কাজ দেন অথবা কাজ ফেলে চলে যান তাহলে তার চলতি কাজের বিলসহ জমাকৃত সকল সিকিউরিটির টাকা বাজেয়াপ্ত করে তার কাজের ওয়ার্ক অর্ডার বাতিল করা যেতে পারে।’  কিন্ত, বাস্তবে কিছুই করা হয়নাই।

হাসপাতাল নিমার্ণে সার্বিক অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ডা. আব্দুল মতিন প্রকৌশলনিউজ ডটকমকে বলেন, আমাদের টোটাল ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৬১ শতাংশ। তিনি বলেন, ব্যয়বৃদ্ধি ছাড়াই জুন মাসে কাজ শেষ করার কথা কিন্ত কাজের যে অগ্রগতি তাতে জুনে সম্ভব হবেনা। কেন দেরী এতো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুলত: সাব-কন্ট্রাক দেওয়ার কারণে ব্যয় সময় ক্ষেপন হয়েছে।

ঠিকভাবে তদারকি করে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই তদারকিটা এখন করে, আগে করেন নাই। যে কারণে আমাদের দেরী হয়ে গেছে।  

তিনি ‘ইঞ্জিনিয়ার-কন্ট্রাকট্রর ভাই ভাই’ বলেও আক্ষেপ করে বলেন।  

পটুয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, আমাদের এখানে সবার প্রজেক্ট অফিস আছে। তিনি আরো বলেন, এখানে এমএম বিল্ডার্সের মনোনীত প্রতিনীধিরাই কাজ করে।

লগ বইয়ে সাক্ষরের বিষয়ে জানতে চাইলে আগে হইতো না জানালেও এখন নিয়মিত হয় বলে উল্লেখ করেন।

আইএমইডির প্রতিবেদনকে ‘উনাদের মতো দিয়েছেন’ বলে উল্লেখ করে হারুন অর রশিদ বলেন, এখানে কোন অনিয়ম হয় নাই। সঠিকভাবে কাজ চলছে।