ছাত্রদলের সভাপতিসহ ১৭৪ জন বিরুদ্ধে দুই থানায় মামলা
ছাত্রদলের সভাপতিসহ ১৭৪ জন বিরুদ্ধে দুই থানায় মামলা
রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে পল্টন ও রমনা থানায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। ময়মনসিংহে ছাত্রদলের বিভাগীয় আলোচনাসভাকে কেন্দ্র করে পুলিশের ‘অতর্কিত হামলা’র ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল বের করলে এ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ ও বেশ কয়েকজন ছাত্রদল নেতাকর্মী আহত হন। বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
ঘটনার জেরে বৃহষ্পতিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহ আল মামুন বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে ছাত্রদলের কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সিনিয়র সহসভাপতি রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন, সহসভাপতি মামুন খান ও তানজিল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্রালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম, সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমানসহ ৬৪ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অচেনা আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন।
এর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে অর্থাৎ শুক্রবার প্রথম প্রহরে (১২টা ২৫ মিনিট) রমনা থানার এসআই মো. তোফাজ্জল হোসেন বাদি হয়ে ছাত্রদলের সভাপতি খোকনসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অচেনা আরও ৮০ জনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন।
পৃথক দুই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে এজাহারভুক্ত আসামি মো. তরিকুল ইসলাম, রেজাউল, বি এম কাউসার, রাধে শ্যাম বিশ্বাস, বাহাউদ্দিন সোহেল, সাইদুজ্জামান সুজন ও মো. আল ইমরান হিমেলকে। তারা সবাই ছাত্র দলের কর্মী বলে জানা গেছে।
ফজলুর রহমান খোকনসহ গ্রেপ্তার ও পলাতক ৬৪ জন আসামি ছাড়াও ছাত্রদলের অচেনা আরও অনেকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত এজাহারে এসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন উল্লেখ করেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি পার্টি অফিস-২ এলাকায় সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে নিয়োজিত ছিলেন। এ সময় ছাত্রদলের মহানগর কমিটি ও অন্যান্য কমিটি গঠনের জন্য আসামিরা ছাড়াও ছাত্রদলের অচেনা আরও অনেকে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করছিলেন।
বিকাল পৌনে ৫টার দিকে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেত হয়ে তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আকস্মিক মিছিল বের করে রাস্তা অবরোধ করে। এ সময় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও বাশের লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। ইটের ও বাশের লাঠির আঘাতে এসআই মো. রফিকুল ইসলাম মাথায় ও বাম হাতে গুরুতর জখম হন। কনস্টেবল নুর নবী, আব্দুল্লাহ ও আশরাফ বুকে ও হাতে গুরুতর জখম হন।
পরে তাদের চিকিৎসার জন্য রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে থানার ওসিসহ ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ওই ৫ জনকে আটক করেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে এজাহারনামীয় অন্য আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেক ছাত্র দলের নেতা কর্মীরা বিভিন্ন শ্লোগান দিয়া নাইটিঙ্গেল দিকে যাওয়ার সময় ঢাকা মেট্রো গ-১১-৭৫২৬ গাড়ী এবং নাইটিঙ্গেল মোড়ে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশের বক্স ও দায়িত্বরত সার্জেন্টের মোটর সাইকেল ভাঙচুর করে।
আসামীরা বে-আইনিভাবে জনতাবদ্ধে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পথরোধ করে রাস্তায় যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, দাঙ্গা করে পুলিশের সরকারি কাজে বাধা দিয়ে ইচ্ছাকৃত আক্রমণ করা ছাড়াও হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশের উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশকে গুরুতর আহত করা ও ক্ষতি সাধন করায় পেনাল কোড আইনের ১৪৭/১৪৮/১৪৯/১৮৬/৩৩২/৩৩৩/৩০৭/৩৫৩/৪২৭/১০৯/৩৪ ধারায় নিয়মিত মামলা রুজু এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে মর্জি হয়।
রমনা থানার এসআই মো. তোফাজ্জল হোসেন এজাহারে উল্লেখ করেন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে সঙ্গীয় ফোর্সসহ সিয়েরা-২১ ডিউটিতে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। এ সময় থানার বেতার যোগে খবর পান, পল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, থানা, ওয়ার্ড ও স্থানীয়) নেতা-কর্মীরা অস্ত্র ও লাঠি-সোটা হাতে মিছিল করে নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে প্রেস ক্লাবের দিকে এগিয়ে আসছে।
খবর পেয়ে ফোর্সসহ রমনা থানাধীন সেন্ট্রাল ‘ল’ কলেজের সামনে আসতেই মিছিল থেকে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা রাস্তা পার হয়ে এসে অতর্কিতভাবে পুলিশের উপর লাঠি-সোটা ও ইট পাটকেল ছুড়ে হামলা করে। তাদের হামলায় এসআই তোফাজ্জল হোসেন ছাড়াও কনস্টেবল মো. আব্দুল কুদ্দুস, জহুরুল ও এক সাধারন আনসার সদস্য আহত হন। একপর্যায়ে পুলিশ ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করলে তারা রাস্তায় থাকা ঢাকা মেট্রো গ-৩৯-৪১৩৮, ঢাকা মেট্রো স-১১-০২৫৪, ঢাকা মেট্রো ঠ-১৩-২৭৭৬ এবং অন্যান্য গাড়ী ভাঙচুরসহ জনগণের জান ও মালের ব্যাপক ক্ষতি করে।
খবর পেয়ে অন্য পুলিশ সদস্যরা অভিযান চালিয়ে সাইদুজ্জামান সুজন ও আল ইমরান ই হিমেলকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় ছাত্র দলের নেতা কর্মীরা ‘জিয়ার সৈনিক এক হও, লড়াই কর, খালেদা জিয়ার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই, তারেক জিয়ার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই, তারেক জিয়া এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথেসহ রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে আহত পুলিশ ও আনসার সদস্যরা কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এজাহার নামীয় গ্রেপ্তার ও পলাতক আসামিরা বেআইনী জনতাবদ্ধে দাঙ্গা করে সরকারী কাজে বাঁধা প্রদান করা ছাড়াও পুলিশকে আক্রমণ ও আঘাত করে আহত করা এবং পুলিশের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ঢাল ক্ষতিসাধন করে পেনাল কোডের ১৪৩/১৪৭/১৪৯/১৮৬/৩৩২/৩৫৩/৪২৭/১০৯/৩৪ ধারায় অপরাধ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষে এজাহার দায়ের করেন তিনি।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিকী জানান, বৃৃহস্পতিবার বিকালে ছাত্রদলের কর্মীরা পল্টন এলাকায় রাস্তায় নেমে ভাঙচুর শুরু করেন। তারা অতর্কিতভাবে পুলিশের ওপর হামলা এবং পুলিশ বক্স ও গাড়িতে ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ছাত্রদলের কর্মীদের রাস্তা থেকে উঠিয়ে দেয়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস