টিআইবি’র দুদকের নতুন নেতৃত্ব নিয়োগে স্বচ্ছতার দাবি
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দুদকের নতুন নেতৃত্ব নিয়োগে স্বচ্ছতা চায়। বৈশ্বিক দুর্নীতি নিয়ে কাজ করা সংস্থাটি বলেছে, করোনা অতিমারির আর্থ-সামাজিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে স্বাস্থ্যখাতসহ সংশ্লিষ্ট সবখাতে সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’ ঘোষিত রাজনৈতিক অঙ্গীকারের কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হবে। সেসব ক্ষেত্রে, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে ‘চুনোপুঁটি’ টানাটানির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সত্যিকারের প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) টিআইবি থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের প্রাক্কালে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, সুশাসিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে দেশে আইনের শাসন ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। তাই সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন, বিচার প্রক্রিয়া, নির্বাচন কমিশন ও মানবাধিকার কমিশনের নিরপেক্ষতা, বস্তুনিষ্ঠতা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিতের পাশাপাশি, গণমাধ্যম ও দেশবাসীর স্বাধীন মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার অক্ষুণ্ন রাখার জোর দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
‘কোভিড-১৯ সংকটের মধ্যে যেসব অভাবিত ঘটনা সামনে এসেছে’, তাতে দুর্নীতি যেদেশে সর্বব্যাপী একটা রূপ নিয়েছে এটাই এখন অপ্রিয় সত্য এমন মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করা ছাড়া আর কি করণীয় আছে সেটাই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ ঘোষণা থাকলেও এখনকার বাস্তবতায় তা কী অর্থ বহন করে তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেন না। আমরা দেখতে পাচ্ছি এই ঘোষণার বাস্তবায়ন আটকে যাচ্ছে শুধু চুনোপুঁটিদের টানাটানিতে। অথচ এই পর্যায়েই দুর্নীতির যে ভয়াবহতার কথা আমরা জেনেছি, তাতে এই প্রক্রিয়ার মূল কারিগর-যারা পেছনে থেকে কলকাঠি নাড়ছে, তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপ্তি ও আর্থিক মূল্য কী হতে পারে, সেটা চিন্তা করলেও আতঙ্কিত হতে হয়। একজন ছাত্রনেতার হাজার কোটি টাকা পাচার করার খবর দিয়েছে গণমাধ্যম মাত্র কয়দিন আগে। আরো ওপরের দিকের দুর্নীতিবাজ নেতাদের অবস্থা তো আমাদের কল্পনারও বাইরে। অথচ তাদের কারো বিষয়ে কোনো তদন্ত বা কার্যকর আইনি ব্যবস্থার খবর তো আমরা কখনও দেখিনি!’
‘রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক অন্য যেকোনোভাবে ক্ষমতাবানরা বিচারহীনতা উপভোগ করছে’, এমন অভিযোগ করে ড. জামান বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এক্ষেত্রে কার্যত ক্ষমতার বি-টিমের ভূমিকা পালন করছে। দুর্নীতি দমন ও এর কার্যকর প্রতিরোধে দুদককে কাগুজে বাঘের পরিচয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের মেয়াদপূর্তি আসন্ন এবং দুদককে কার্যকর সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটাকে একটা সুযোগ হিসেবে নিতে হবে। আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে সৎ, যোগ্য, নিরপেক্ষ, নেতৃত্ব গুণাবলিসম্পন্ন দৃঢ়চেতা ও পেশাদার নেতৃত্বের নিয়োগ নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। আমরা আশা করি, সরকার আমাদের হতাশ করবে না। ’
দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে স্বাধীন মতামত ও সংবিধান স্বীকৃত বাক স্বাধীনতাচর্চা অপরিহার্য উল্লেখ করে আরও ড. জামান বলেন, ‘এক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও দেশবাসী সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং সহযোদ্ধা। অথচ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কালাকানুনসহ অন্য আরো সব আইনের যথেচ্ছ অপব্যবহার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিবন্ধক হয়ে উঠেছে। দেশে মৌখিকভাবে স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্ত গণমাধ্যমের প্রচার থাকলেও বাস্তবে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক উভয় পদ্ধতিতেই গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। তাই অবিলম্বে মুক্ত সাংবাদিকতা ও সাধারণের মতপ্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করি, সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে একটি সুশাসিত গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হবে, তারই আহ্বান অনুসারে ঘরে ঘরে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্গ’ গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেবে এবং এ উদ্যোগে সম্পৃক্ত করা হবে দেশের প্রতিটি মানুষকে’।