নায়ক সোহেল চৌধুরীর খুনী ২৩ বছর পর গ্রেফতার

বাংলা সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় স্টাইলিশ চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীসহ কয়েকটি হত্যা মামলার আসামি ইউনিয়ন চেয়াম্যান ফারুক সরকার আব্বাসীকে ২৩ বছর পর গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার বিকেলে রাজধানীর হাজারীবাগ থানার পূর্ব রায়েরবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি মেঘনা উপজেলার ভাওরখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।

নায়ক সোহেল চৌধুরীর খুনী ২৩ বছর পর গ্রেফতার

বাংলা সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় স্টাইলিশ চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীসহ কয়েকটি হত্যা মামলার আসামি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ফারুক সরকার আব্বাসীকে ২৩ বছর পর গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার বিকেলে রাজধানীর হাজারীবাগ থানার পূর্ব রায়েরবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি মেঘনা উপজেলার ভাওরখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।

বৃহস্পতিবার কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শাহরিয়ার মোহাম্মদ মিয়াজী গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মেঘনা থানা পুলিশ ও কুমিল্লা ডিবি তত্ববধানে তাকে কুমিল্লা জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল দুটি মামলায় ওই চেয়ারম্যান উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের আগাম জামিনে রয়েছেন। তবে বাদীপক্ষ ওই জামিন বাতিলের জন্য আপিল করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই চেয়ারম্যানের অস্ত্র মামলার আগাম জামিন আপিল বিভাগ স্থগিত করেছেন বলে আমরা জেনেছি। এরপর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য গত দু’দিন আমরা তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখি। বুধবার নিশ্চিত হই, অস্ত্র মামলায় তাকে উচ্চ আদালতের দেওয়া আগাম জামিনটি স্থগিত করা হয়েছে। এরপর অভিযান চালিয়ে তাকে বুধবার বিকেলে ঢাকার হাজারীবাগ থানার পূর্ব রায়েরবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চেয়ারম্যান ফারুক আব্বাসী ভাওরখোলা গ্রামে নাজমা বেগম (৫০) নামে এক নারীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি। এ ছাড়া গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ওই হত্যাকাণ্ডের দিন তার বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় তাকে প্রধান আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। বুধবার ওই অস্ত্র মামলায় কুমিল্লা জেলা ও মেঘনা থানা পুলিশের সদস্যরা ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিয়াজী আরো জানান, চেয়ারম্যান আব্বাসী বর্তমানে তাদের হেফাজতে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার তাকে কুমিল্লার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হবে।

গত ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে আব্বাসীর সঙ্গে বিরোধ চলছিল উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম সিরাজের। এর জের ধরে ১৯ ফেব্রুয়ারি ভাওরখোলা গ্রামে আব্বাসীর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী সিরাজ ও তার ভাই আবদুস সালামের ঘরে হামলা চালিয়ে ৬ জনকে কুপিয়ে আহত করে। এর মধ্যে মারা যান সালামের স্ত্রী নাজমা বেগম। এ ঘটনার পরদিন ফারুক আব্বাসীকে প্রধান আসামি করে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের দেবর সিরাজুল ইসলাম।

এছাড়া আব্বাসীর বিরুদ্ধে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে নায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

মেঘনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী ফারুক আব্বাসির বিরুদ্ধে মেঘনা থানায় দুটি হত্যা মামলাসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তাকে কুমিল্লা ডিবি পুলিশ ও মেঘনা থানার পুলিশ যৌথ অভিযানে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

দেশীয় চলচ্চিত্রের সুদর্শন নায়ক সোহেল চৌধুরী ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ডিসেম্বর, ঢাকার বনানীতে আততায়ীর বন্দুকের গুলিতে নিহত হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৫ বছর।

সোহেল চৌধুরী (সুলাইমান চৌধুরী সোহেল) ১৯৬৩ সালের ১৯ অক্টোবর, ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর বাবার নাম তারেক আহমেদ চৌধুরী । মা নূরজাহান বেগম । সোহেল চৌধুরী এক অভিজাত ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন ।

সুদর্শন ও ফ্যাশনেবল সোহেল চৌধুরী, ৮০ দশকের শুরুর দিকে সেঞ্চুরি ফেব্রিক্সের মডেল হিসেবে শো-বিজে আসেন। সেসময় বিজ্ঞাপন করে দর্শকদের নজর কাড়েন তিনি।

১৯৮৪ সালে, এফডিসি আয়োজিত ‘নতুন মুখের সন্ধানে’র মাধ্যমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় সোহেল চৌধুরীর । সেই বছরেই নির্মাতা এফ কবির চৌধুরী পরিচালিত ‘পর্বত’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। সোহেল চৌধুরী অভিনীত অন্যান্য ছবি- ভাই বন্ধু, লক্ষ্মীবধূ, হীরামতি, বিরহ ব্যথা, দাঙ্গা ফ্যাসাদ, বীরবিক্রম, পাপীশত্রু, টার্গেট, জুলি, পরমা সুন্দরী, কোবরা, দুঃখ নেই, আমার ভালোবাসা, প্রেমের প্রতিদান, কালিয়া, প্রতিশোধের আগুন, বীরযোদ্ধা, দোষী, চিরদিনের সাথী, অবরোধ, লৌহমানব, রাজাগুন্ডা, দেশদুশমন, চাঁদাবাজ, বদলা নেব, খুনের বদলা, লেডি ইন্সপেক্টর, আজকের হাঙ্গামা, লেডি স্মাগলার, হিংসার আগুন, প্রেমের দাবি, প্রিয়শত্রু, মৃত্যুদন্ড, মাটিরদুর্গ, মহান বন্ধু, প্রভৃতি ।

ব্যক্তিজীবনে সোহেল চৌধুরী, ১৯৮৬-তে তাঁর সহ-শিল্পী নায়িকা দিতিকে বিবাহ করেন। দিতির সাথে সাংসারিক জীবনে তাদের দুইটি সন্তান আছে। মেয়ে লামিয়া চৌধুরীর ও ছেলে দীপ্ত চৌধুরীর। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে দিতি ও সোহেল চৌধুরীর দাম্পত্য জীবনের বিচ্ছেদ ঘটে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে যে কজন সুদর্শন নায়ক এসেছেন, সোহেল চৌধুরী ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। দেশীয় চলচ্চিত্রে স্টাইলিশ বা ফ্যাশনেবল নায়কদের মধ্যে তিনিও একজন। অমিতসম্ভাবনাময় এই নায়ক, নিজের প্রতিভার স্ফুরণ ছড়ানোর আগেই, তাঁর জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয় ঘাতকের তপ্ত বুলেট। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একজন সুদর্শন-সম্ভাবনাময় নায়কের অপমৃত্যু ঘটে।

প্রকৌশল নিউজ/প্রতিনিধি