পরীমণির বাসায় মদের বার!
রাজধানীর বনানী ১৯/এ সড়কের ১২ নম্বর বাড়ির পাঁচতলাতে ঢুকলে যে কেউ প্রথম দফায় চমকে উঠবেন। সারি সারি বিশ্বের নামিদামি ব্র্যান্ডের মদের বোতল সাজানো দেখে মনে হবে পশ্চিমা দেশগুলোর কোনো বিলাসবহুল বারে ঢুকে পড়েছেন আপনি।
রাজধানীর বনানী ১৯/এ সড়কের ১২ নম্বর বাড়ির পাঁচতলাতে ঢুকলে যে কেউ প্রথম দফায় চমকে উঠবেন। সারি সারি বিশ্বের নামিদামি ব্র্যান্ডের মদের বোতল সাজানো দেখে মনে হবে পশ্চিমা দেশগুলোর কোনো বিলাসবহুল বারে ঢুকে পড়েছেন আপনি। তবে পাঁচতলার এ ফ্ল্যাটে ঢুকে আপনি বার বা যাই মনে করেন না কেন আসলে এটাতে থাকেন দেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমণি। নামিদামি মদের বোতলে ঘেরা ও বারের আদলে সাজানো এটি পরীমণিরই বাসা। এই বাসাতেই নিয়মিত মদের আসর বসান পরীমণি। রাতভর চালান পার্টি ও গান-বাজনা। পরীমণির বাসার এমনই চিত্র উঠে এসেছে এ প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে।
গত ১৩ জুন রাতে ধর্ষণচচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন হালের জনপ্রিয় এ নায়িকা। পরীমণির নিজ বাসাতেই আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলন কাভার করতে যান বিভিন্ন গণমাধ্যমের একাধিক সাংবাদিক। এদের মধ্যে অনেকেই আবার বিনোদন বিটের বাইরের লোক। এমনই কয়েকজন সংবাদিক পরীমণির বাসাতে ঢুকে শুরুতেই ধন্দে পড়ে যান। পরীমণির বাসার ঠিকানা ভুল করে কি কোনো বারে ঢুকে পড়েছেন কি-না এই চিন্তা পেয়ে বসে তাদের। কারণ, ড্রইংরুমে ঢুকতেই হাতের বাম পাশে দেখা যাবে কাচঘেরা বিশাল একটি ঘর। স্বচ্ছ কাচেঘেরা এ রুমে সাজানো সারি সারি বিদেশি ব্রান্ডের মদের বোতল। সুন্দর ডেকোরেশনের নানা সাইজের র্যাকে সারি সারি বোতল দাঁড়িয়ে আছে।
আবার কিছু বোতল কাত করে শুইয়ে রাখা হয়েছে। ছোট ছোট টেবিলের ওপরও রাখা আছে বোতল। চকচকে-ঝকঝকে এসব মদের বোতল গুনে শেষ করার মতো নয়।
কাচঘেরা এ বিশাল ঘরজুড়ে মদের বোতল আর মদ খাওয়ার প্রয়োজনীয় উপকরণ স্থানে স্থানে গোছানো আছে। বিভিন্ন সাইজের আর ডিজাইনের গ্লাস দেখলে যে কেউ বিমোহিত হয়ে যাবেন। তৃষ্ণা বাড়বে পানীয়প্রিয়দের। পরীমণির বাসায় গেলে যারা কখনোই মদ খাননি তারাও চাকচিক্য, আভিজাত্য আর নামিদামি ব্রান্ডে বিমোহিত হয়ে এক চুমুক খেতে চাইবেন।
এদিকে, ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমণি-কাণ্ডের পর বেশ কিছু বিষয় খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে পুলিশ। নিয়ম ভেঙে কয়েকটি সোশাল ক্লাবে মধ্যরাতে পরীমণির যাতায়াত এবং মদ্যপানের খোঁজখবর করছে পুলিশ। এরই মধ্যে বনানী থানা পুলিশ গুলশানের একটি অভিজাত ক্লাবের বার বয়ের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করেছে।
এ ছাড়া আরও কয়েকটি অভিজাত ক্লাবের কর্মকর্তারা পুলিশকে জানিয়েছেন, মধ্যরাতে নিয়ম ভেঙে পরীমণির জন্য বার খোলা রাখতে হয়। তারা পুলিশকে বলছেন, মদের আসর বসানোর গল্পও। বোট ক্লাব-কাণ্ডের আগের রাতে গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাবে ঢোকেন পরীমণি। মধ্যরাতে সেখানে তিনি ভাঙচুরও করেন। এটি তদন্তে গত বুধবার সন্ধ্যায় গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ৮ জুন বুধবার রাতে বোট ক্লাবে পরীমণি-কাণ্ডের তদন্তে নেমে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হচ্ছে। তার ব্যাপারে জানাতে ঢাকার একাধিক সোশাল ক্লাবের কর্মকর্তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
তারা পুলিশ ও গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, পরীমণি তার কস্টিউম ডিজাইনার জিমিসহ কয়েকজন তরুণ-তরুণী নিয়ে প্রায়রাতেই অভিজাত ক্লাব ও তারকা হোটেলে ঘুরে বেড়াতেন। তাদের সঙ্গে নিয়ে মদ পান করতেন মধ্যরাত পর্যন্ত। এক্ষেত্রে প্রায় রাতেই তার কারণে ক্লাবের আইন ভাঙা হতো। বিশেষ করে হাফপ্যান্ট পরে তার সঙ্গী হওয়া জিমি ড্রেসকোডের তোয়াক্কা করতেন না কখনোই। এক ক্লাবে সময় কাটিয়ে তিনি যেতেন আরেক ক্লাবে।
গুলশান পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত ৩ জুন রাত ১২টার পর পরীমণি তার সাবেক বাগদত্তা সাংবাদিক তামিম হাসান ও দুটি বেসরকারি টেলিভিশনের দুজন কর্মকর্তা পরিচয়ধারীকে নিয়ে গুলশানের একটি অভিজাত ক্লাবে যান। তখন তারা মদ্যপ ছিলেন। ক্লাবে ঢুকে পরীমণি ও অন্যরা বার ব্যবহার করতে চান। বার বয় জালাল এতে অসম্মতি জানালে পরীমণি তার গালে চড় মারেন। ক্লাব কর্মকর্তারা বেসামাল আচরণের প্রতিবাদ করলে তিনি নিজেই পুলিশে কল করেন। গুলশান থানা পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যান সেখানে যায়। পরে তারা বুঝিয়ে পরীমণিকে বাসায় পাঠান। এ খবর পুলিশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সীমানাঘেঁষা এলাকা হওয়ায় গতকাল বুধবার বনানী থানা পুলিশ ওই ক্লাবের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বার বয় জালালের কাছ থেকে সেই রাতের ঘটনা জানতে চায়। ক্লাবটির সদস্য (প্রশাসন) এ জন্য পুলিশের কাছে সময় চেয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে একাধিক ক্লাব কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সব ক্লাবের ড্রেসকোড এবং নিয়ম রয়েছে। রাত ১১টার পর ক্লাব ও বারে সার্ভিস বন্ধ রাখার নিয়ম। পরীমণি যতবার যে ক্লাবে অতিথি হয়ে গেছেন সেখানেই এর ব্যত্যয় ঘটেছে। বনানীর একজন ব্যবসায়ী জানান, পরীমণি কথায় কথায় পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করেন। সেলিব্রেটি হওয়ায় পুলিশও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে মজা পায়। গায়ে দামি পারফিউম মেখে বিলাসবহুল গাড়িতে ঘুরে বেড়ানো পরীর মুখে মদের গন্ধ থাকলেও কেউ তাকে আটকাতে সাহস করেন না। গাড়ির বহর নিয়ে ছুটে চলা পরীমণি দলবল নিয়ে ক্লাবের বারে ঢুকে দামি ব্রান্ডের বিদেশি মদের বোতল হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ পাচ্ছে পুলিশ। তার সঙ্গের লোকজন বারের বিল পরিশোধ করেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোনের একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশের সব অভিজাত ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে পরীর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাদের রেফারেন্সে তিনি সেখানে যাতায়াত করেন। তারকা হোটেলের বারেও তার যাতায়াতের তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস