করোনার ভারতীয় রূপ কতটা ভয়ংকর?

প্রায় প্রতিদিনই করোনা শনাক্তের রেকর্ড হচ্ছে ভারতে৷ ধারণা করা হচ্ছে এর পেছনে দেশটিতে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন রূপের ভূমিকা থাকতে পারে৷ এ নিয়ে এখন পর্যন্ত পাওয়া কিছু তথ্য থাকছে ছবিঘরে

করোনার ভারতীয় রূপ কতটা ভয়ংকর?

প্রায় প্রতিদিনই করোনা শনাক্তের রেকর্ড হচ্ছে ভারতে৷ ধারণা করা হচ্ছে এর পেছনে দেশটিতে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন রূপের ভূমিকা থাকতে পারে৷ এ নিয়ে এখন পর্যন্ত পাওয়া কিছু তথ্য উল্লেখ করা হলো। 

বি.১.৬১৭
এমন নামেই পরিচিত করোনার নতুন ভারতীয় ধরনটি৷ দেশটিতে দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর কারণ এটি কিনা সেটি অবশ্য এখনও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না৷ তবে সম্ভাব্য একটি কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে এই ভ্যারিয়েন্টকে৷

কখন থেকে?
গত মার্চে ভারতের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ প্রথম এই ভ্যারিয়েন্টের কথা জানায়৷ ভাইরাসের এই ধরনটি দুইবার রূপ বদলেছে বলে সেসময় জানিয়েছেন কর্মকর্তারা৷ তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা সেটি এখন তৃতীয়বারের মতো রূপ বদলেছে৷ জিনগত উপাত্তের উন্মুক্ত তথ্য ভাণ্ডার জিআইএসএইড-এর (GISAID) তথ্য অনুযায়ী ভারতে বিদ্যমান করোনা ভ্যারিয়েন্টের ৬৩ ভাগই এখন বি.১.৬১৭৷

কতটা উদ্বেগের?
প্রথম রূপটি (E484Q) অনেকটা ব্রাজিলে ও দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্রুত সংক্রমণ ঘটানো ভ্যারিয়েন্টের মতো৷ দ্বিতীয়টি (L452R), এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পাওয়া গেছে৷ এই ধরনটি টিকার রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থাকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম এবং বেশি মারাত্মক বলে মনে করা হচ্ছে৷ আর তৃতীয় রূপটি (P681R) উচ্চ সংক্রমণপ্রবণ যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টটির কাছাকাছি৷

কতটা ছড়িয়েছে?
ভারতের বিভিন্ন রাজ্য নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া যাচ্ছে৷ শুধু ভারত নয় এটি ছড়িয়ে পড়েছে অন্য দেশগুলোতেও৷ জার্মানি, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষও দেশগুলোতে বি.১.৬১৭ শনাক্ত করেছে৷

মানবদেহে কী করছে?
একাধিক রূপ বদলের কারণে ভাইরাসটি শরীরে দ্রুত ছড়াতে পারে৷ বিশেষ করে এর পক্ষে শরীরে এন্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যাওয়াও সহজ হতে পারে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তি বা যারা টিকা নিয়েছেন তাদেরও এই ভ্যারিয়েন্টে নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী বলছে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ তালিকায় রেখেছে৷ অর্থাৎ, তারা ভাইরাসটি নজরদারিতে রেখেছে, তবে এখনও সেটি বড় ধরনের উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছেনি৷ উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছালে এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ ঘোষণা করা হতে পারে৷

বেশি সংক্রামক নয়?
ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই রয়েছে মতপার্থক্য৷ যুক্তরাজ্যের কোভিড-১৯ জেনোমিকস ইনিশিয়েটিভ এর পরিচালক ড. জেফারি ব্যারেট এর মতে গত কয়েক মাসে ভ্যারিয়েন্টটি বেশ ধীর গতিতে ছড়িয়েছে৷ আর এজন্য তিনি এটিকে যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৭ এর মত সংক্রামক নয় বলে মনে করছেন৷

উপাত্ত কী বলে?
জিনগত বিশ্লেষণে মহারাষ্ট্রে ৬০ শতাংশের বেশি করোনা আক্রান্তের নমুণায় এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে৷ তবে কর্তৃপক্ষ বলছে তারা যত নমুনা পরীক্ষা করেছেন সেটি উপসংহারে পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট নয়৷

টিকায় কি কাজ হচ্ছে?
অন্তত দুইটি গবেষণা বলছে ভ্যারিয়েন্টের এল৪৫২আর রূপটি অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়িয়ে যেতে পারে৷ তবে এর একটি এখনও অপ্রকাশিত এবং অ্যাকাডেমিকভাবে পিআর রিভিউ সম্পন্ন হয়নি৷

অতিরঞ্জন হচ্ছে?
অনেকে অবশ্য বলতে চাইছেন ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় যেসব তথ্য আসছে তার মধ্যে অতিরঞ্জন রয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিয়োনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জেরেমি পি কামিল তাদের একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘এমন কোন নির্ভরযোগ্য গবেষণা নেই যেখানে বলা হয়েছে এল৪৫২ রূপটি সব ধরনের ইমিউনিটি বা অ্যান্টিবডিকে এড়াতে পারে৷’’ সেটি সম্ভব নয় বলেও মত তার৷

(নিউজটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া )