কুষ্টিয়ায় পরকীয়ার জেরে তিনজনকে গুলি করে হত্যা  

কুষ্টিয়া শহরের কাস্টম মোড়ে প্রকাশ্যে স্ত্রী ও সৎ ছেলেসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেছেন খুলনার ফুলতলা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সৌমেন কুমার।শাকিলের সঙ্গে ‘পরকীয়ার’ কথা জেনে যাওয়ায় আসমা-সৌমেন দম্পতির মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। আর এর জেরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। এছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে টাকা পয়সা লেনদেনের সম্পর্ক রয়েছে কি না, পুলিশ তাও খতিয়ে দেখছে।  

কুষ্টিয়ায় পরকীয়ার জেরে তিনজনকে গুলি করে হত্যা  

কুষ্টিয়া শহরের কাস্টম মোড়ে প্রকাশ্যে স্ত্রী ও সৎ ছেলেসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেছেন খুলনার ফুলতলা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সৌমেন কুমার। শাকিলের সঙ্গে ‘পরকীয়ার’ কথা জেনে যাওয়ায় আসমা-সৌমেন দম্পতির মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। আর এর জেরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। এছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে টাকা পয়সা লেনদেনের সম্পর্ক রয়েছে কি না, পুলিশ তাও খতিয়ে দেখছে।  
  
রোববার (১৩ জুন) সকাল ১১টায় ম.আ. রহিম সড়কের (পিটিআই রোড) কাস্টমস মোড়ে ডা. আজাদুর রহমানের চারতলা ভবনের নিচতলার মার্কেটের মধ্যে গুলিবর্ষণের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হত্যাকারী সৌমেন কুমারকে ধরে পুলিশে দিয়েছেন স্থানীয় জনগণ।

নিহতরা হলেন-কুমারখালী উপজেলার সাওতা গ্রামের বাসিন্দা মেজবার খানের ছেলে মোবাইল ব্যাংকিং কর্মী শাকিল খান (২৮), নাথুরিয়া বাশগ্রামর বাসিন্দা আমির আলীর মেয়ে আসমা খাতুন (৩৪) এবং নিহত আসমার ছেলে রবিন (৭)।  

স্থানীয়রা জানায়, আসমার প্রথম স্বামী হলেন কাঞ্চনপুর এলাকার রুবেল। রবিন তাদের ছেলে। পরকীয়া করে দেড় বছর আগে রুবেলের সংসার ছেড়ে পুলিশ সদস্য সৌমেন কুমারকে বিয়ে করেন আসমা। সৌমেন কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার হালসা পুলিশ ক্যাম্পে কর্মরত থাকার সুবাদে আসমা ও সৌমেন দম্পতি কুষ্টিয়া শহরে বাসা ভাড়া করে থাকতেন। পরে খুলনার ফুলতলা থানায় সৌমেন বদলি হয়ে গেলে ছেলেকে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের ভাড়া বাসায়ই থাকতেন আসমা। কাস্টম মোড়ে শাকিলের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকান থাকায় প্রায়ই সেখানে যাতায়াত ছিল আসমার। এর সূত্র ধরে শাকিলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন আসমা। বিষয়টি সৌমেন জানার পর একাধিকবার আসমাকে সতর্ক করেন এবং তাদের মধ্যে এ নিয়ে মনোমালিন্য হয়। এর জের ধরেই স্ত্রী, সৎ ছেলে আর শাকিলকে গুলি করে হত্যা করেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রোববার বেলা সাড়ে ১১টার সময় কাস্টম মোড়ের ডা. আজাদুর রহমানের চারতলা ভবনের নিচতলার মার্কেটের ভেতর থেকে গুলির শব্দ শুনে স্থানীয় কয়েকশ’ লোক জড়ো হয়ে সেখানে যান। এসময় তারা মার্কেটের মেঝেতে এক নারী ও পুরুষের এবং মার্কেটের সামনে একটি শিশুকে রক্তাক্ত অবস্থায় নিথরভাবে পড়ে থাকতে দেখেন। আর এসময় সেখানে অস্ত্রধারী এক যুবক তাদের রিভলবার উঁচু করে গুলি করার ভয় দেখান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কয়েকশ’ লোক ওই যুবককে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়লে তিনি হাতের অস্ত্র ফেলে দেন। পরে তাকে মার্কেটের মধ্যে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন তারা।  

রাস্তার বিপরীত পাশের চা দোকানি বলেন, হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি, মার্কেটের ভেতর থেকে একটা ছোট্ট শিশু ছুটে বের হলো, ওর পেছনে পিস্তল ধরা লোকটি ছুটে এসে শিশুটিকে ধরে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করলো। তখনই শিশুটি মাটিতে পড়ে যায়। প্রকাশ্যে শিশুটিকে যেভাবে গুলি করলো, তাতে মনে হলো কতই না রাগ বাচ্চাটার ওপর।

নিহত আসমার মা হাসিনা খাতুনের দাবি, আসমা ও শাকিলের মধ্যে বৈবাহিক কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবে তারা মোবাইলে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন। আর আসমা দেড় বছর আগে প্রথম স্বামীকে ছেড়ে চলে এসে সৌমেনকে বিয়ে করেন।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল ইসলাম বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আটক এএসআই সৌমেন মাগুরার বাসিন্দা। তিনি বর্তমানে খুলনা ফুলতলা থানায় কর্মরত বলে জানতে পেরেছি। সেই সঙ্গে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে সৌমেন নিহত আসমাকে তার স্ত্রী বলে দাবি করেছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আসমার সঙ্গে শাকিলের কোনো সম্পর্ক বা আর্থিক লেনদেনের ঝামেলা থাকতে পারে। অথবা আসমা, সৌমেন ও শাকিলের মধ্যে ত্রিভুজ কোনো সম্পর্ককে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। আমরা সবগুলো বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করছি।