মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হওয়ায় উচ্ছ্বাসিত ভাসানচরের রোহিঙ্গারা
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নিয়ে নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার নিকট ভাসানচরে স্থানান্তর করেছে সরকার। সেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, আশ্রয়ন প্রকল্পের সহনীয়তা, দুযোর্গ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, জীবিকা ও মানবাধিকারসহ মৌলিক অধিকারের সবগুলো দিক বিবেচনায় নিরাপদ বলে মনে করেন রোহিঙ্গারা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সেখানকার রোহিঙ্গাদের জন্য মৌলিক অধিকারসহ যাবতীয় সমস্যা নিশ্চিত করায় তারা খুশি হয়েছেন।
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নিয়ে নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার নিকট ভাসানচরে স্থানান্তর করেছে সরকার। সেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, আশ্রয়ণ প্রকল্পের সহনীয়তা, দুযোর্গ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, জীবিকা ও মানবাধিকারসহ মৌলিক অধিকারের সবগুলো দিক বিবেচনায় নিরাপদ বলে মনে করেন রোহিঙ্গারা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সেখানকার রোহিঙ্গাদের জন্য মৌলিক অধিকারসহ যাবতীয় সুবিধা নিশ্চিত করায় তারা খুশি হয়েছেন।
প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে জানাগেছে, কক্সবাজারের উখিয়া থেকে ভাসানচরে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য বিরাজ করছে। সেখানে ধাপে ধাপে যে গুচ্ছ বাড়িগুলো তৈরি করা হয়েছে, তার মাঝের সড়কেও বসে গেছে দোকান। সেখানকার ওয়্যারহাউস পেরিয়ে খানিকটা পথ পেরোলেই দেখা যাবে সারি সারি দোকান। সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের ঘরগুলোর সামনে গিয়ে দেখা মেলে তাদের প্রাণচাঞ্চল্য। কয়েক মাস আগে যারা এসেছেন তাদের স্বস্তির সীমা নেই।
সেখানে থাকা রোহিঙ্গা ও তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বিস্তারিত কথা বলেন প্রকৌশলনিউজের সাথে। তিনি বলেন, আমরা তো প্লান করেছি এক লাখ রোহিঙ্গা নিবো, এখন মোটামুটি ১৮ হাজারের বেশি নেওয়া হয়েছে। আবার বৃষ্টি-বাদল হলে কম যাবে আর যাদের নিয়েছি তারা খুবই খুশি।
তিনি আরো বলেন, আমরা ইউএনএইচসিআর এর একটা বড় টিম নিয়ে যাই, তারা চার দিন সেখান ছিল, সবার সাথে সাক্ষাত করেছেন, আর তারা সেখানকার সার্বিক ব্যবস্থায় খুশি হয়েছেন, পছন্দ করেছেন। পরে তারা ওখানকার সার্বিক ব্যবস্থা নিয়ে প্রশংসা করেছেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা সেখানে দিচ্ছি ‘আর্লি স্টেজ লার্ণিং’ মিনিমাম শিক্ষাটা দিচ্ছি। তারা (ইউএনএইচসিআর) বলেছে, এখানে বেশি শিক্ষা দেওয়া উচিত যাতে তারা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। আমরা বলেছি, ‘কোন অসুবিধে নেই, তাদের শিক্ষা দিতে রাজি, তোমরা মিয়ানমারের কারিকুলাম নিয়ে আস, আমরা শিক্ষা দিতে রাজি, আমাদের কোন সমস্যা নেই।’
ড. মোমেন আরো বলেন, আমাদের যে হাসপাতাল আছে, সেগুলো জেনারেল হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে অনেকে বাচ্চার জন্ম দিয়েছেন।
সেখানকার বাঁধ নিয়ে যে আলোচনা আছে সে বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা যে বাঁধ দিয়েছি সেটা একদম ঠিক আছে। তবে পণ্ডিতরা বলছেন, আরো উঁচু লাগবে। আমাদের সেখানকার বাঁধ শুধু একটা না, তিন-চারটা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন স্তর বিবেচনায় বাঁধ দেওয়া হয়েছে। সেখানকার প্রথম বাঁধ যেটা আছে সেটা ঢেউ আসলে রুখতে পারে সেজন্য। এরপর বাকি বাঁধগুলো পর্যায়ক্রমে দেওয়া আছে।
তিনি আরো বলেন, ওখানে যে ঢেউ আসে সেটা ৭ বা ৮ ফুট উঁচু হয়। কিন্ত আমাদের বাঁধগুলো ১৪ বা ১৫ ফুটের বেশি উঁচু। বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসের পানি ঢুকতে পারবে না।
‘এছাড়া আমরা ভাসানচরের সাথে আরো বেশি যোগাযোগ যাতে বাড়ানো যায় সে ব্যাবস্থাও করছি’ বলে জানান মোমেন।
এদিকে, গতমাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের একদল শিক্ষক পরিচালিত ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর: সুবিধা এবং প্রতিকূলতা’ নিয়ে এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, আশ্রয়ণ প্রকল্পের সহনীয়তা, দুযোর্গ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, জীবিকা ও মানবাধিকারসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় ভাসানচর রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য নিরাপদ।
সেই গবেষণা টিম জানিয়েছেন, ভাসানচর বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ। সেখানে আধুনিক সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ছাড়াও আয়-রোজগারসহ উন্নত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, মূল ভূখণ্ড থেকে দ্বীপটিতে যাতায়াতের ভাল ব্যবস্থা ছাড়াও মানবাধিকারের নিশ্চয়তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে।
তারা আরো বলেছেন, ভাসানচরে অবস্থার উন্নতির জন্য আরো অনেক ব্যবস্থা চলমান আছে। গবেষকরা মনে করেন, সেখানে রোহিঙ্গা ছেলে মেয়েদেরকে তাদের নিজ ভাষায় পাঠদান এবং রোহিঙ্গাদেরকে নিজস্ব সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ পালন করার ব্যবস্থার করতে হবে। সুপারিশে কিছু ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প স্থাপন করার কথাও তুলে ধরা হয়েছে, যাতে করে দরিদ্র রোহিঙ্গারা তাদের আয়ের ক্ষেত্রে আরো বৈচিত্র্য আনতে পারে।
এছাড়া গত শুক্রবার (৯ এপ্রিল) ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ুবিষয়ক দূত জন কেরি। তিনি রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বলেন, ‘এখানে বাংলাদেশের একার দায় নয়, বরং জাতিসংঘসহ সকল দেশকে এই দায় নিতে হবে।’
তিনি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশে যে উদারতা দেখিয়েছে তার প্রশংসা করেছেন।
রোহিঙ্গা নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের যে নজর আছে তা উল্লেখ করে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট ও বর্তমানে মিয়ানমারে যা চলছে সেটি মোকাবিলা করা নৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এ সংকট কীভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে বাইডেন প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমার সরকার ভিন্ন পথে হাঁটছে। রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব শুধু বাংলাদেশের নয়। আর এই ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর জো বাইডেন প্রশাসন চাপ অব্যাহত রেখেছে।’
এরআগে, গত ৩ এপ্রিল ভাসানচরে অবকাঠামো ও রোহিঙ্গাদের অবস্থা নিজ চোখে দেখলেন পশ্চিমা দেশগুলোর ১০ জন রাষ্ট্রদূত। দেশগুলো হলো: যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, জাপান, নেদারল্যান্ড ও কানাডা। সেখানে তারা ভাসানচরের বর্তমান অবস্থা নিয়ে খুশি হয়েছেন।
এ সময় তারা ভাসানচরের এক নম্বর ওয়্যারহাউজে বিভিন্ন বয়সের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তাদের সুযোগ-সুবিধা, জীবনযাত্রার মানসহ সার্বিক নিয়ে মতবিনিময় করেন এবং ভাসানচরের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩ (ভাসানচর প্রকল্প) সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে ছয় হাজার ৫০০ একর জায়গায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। কিন্তু ভাসানচরে এক হাজার ৭০০ একর জায়গায় এক লাখ রোহিঙ্গার বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া সেখানে ১৯ ফুট উঁচু বাঁধের ব্যবস্থা করা হচ্ছে যাতে করে জলোস্বাস থেকে রক্ষা করা যায়। এছাড়াও বাঁধের মধ্যে যে জায়গা আছে সেখানে নতুন স্থাপনা তৈরি করা হলে আরও দুই লাখ রোহিঙ্গা আনা সম্ভব।
প্রকৌশলনিউজ/এসআই