৩৩৮টি নারী ও শিশু নির্যাতন ঘটেছে মে মাসে
ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের উপর সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েই চলেছে। চলতি মে মাসে ৩৩৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। যার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৮৩টি, গণধর্ষণ ২৮টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৫টি, প্রতিবন্ধী শিশু ও কিশোরী ধষর্ণের শিকার হয়েছে ৮ জন।
ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের উপর সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েই চলেছে। চলতি মে মাসে ৩৩৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। যার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৮৩টি, গণধর্ষণ ২৮টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৫টি, প্রতিবন্ধী শিশু ও কিশোরী ধষর্ণের শিকার হয়েছে ৮ জন।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের স্বাক্ষরিত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে করা এই প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
এমএসএফ’র প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ধর্ষণের শিকার ৮৩ জনের মধ্যে ৫৬ জন শিশু ও কিশোরী রয়েছে। ধর্ষণের চেষ্টা ১৪টি, যৌন হয়রানি ২০টি ও শারীরিক নির্যাতনের ৪৮টি ঘটনা ঘটেছে। এসময়ে ১২ জন শিশুকিশোরীসহ মোট ৫৯ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। অপহরণের শিকার হয়েছে ২ জন শিশু অপরদিকে ৬ জন শিশুকিশোরী নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়াও মে মাসে ৭ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ ৬৪ জন নারী ও শিশুকিশোরী হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, পারিবারিক বিরোধ, প্রতিশোধ, যৌতুক, তালাক, জমি সংক্রান্ত বিরোধ ইত্যাদি কারণে এ হত্যাকান্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে। এ মাসে ধর্ষণের ৪টি ঘটনা ও ৫টি পারিবারিক ঘটনার অবৈধ সালিশের মাধ্যমে নিস্পত্তির চেষ্টা করা হয়। একজন মৃতসহ ৬ জন নবজাত শিশুকে বিভিন্ন স্থানে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে যা অমানবিক ও নিন্দনীয়। এ শিশুদেরকে কি কারণে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে, সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ তা নিরূপনের চেষ্টা করে না।
এমএসএফ বলছে, দেশব্যাপি ধর্ষণ, শিশু ও নারীদের প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন, শ্লীলতাহানি, যৌন হয়রানী ও নিপীড়নের ঘটনা যে হারে ঘটে চলেছে তাতে করে সামাজিক সুরক্ষা, রাষ্ট্রের দায়দায়িত্ব ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিরন্তর প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
সংগঠনটি আরো বলছে, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও মে মাসে দেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বিগত মাসগুলোর মতই অব্যাহত রয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ নাগরিকদের বস্তুনিষ্ঠ ও স্বাধীন চিন্তা, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং মতামত প্রকাশের সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মত ঘটনা ঘটেছে। দেশে বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ড, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক হত্যা ও নির্যাতন, সীমান্তে হতাহত, এমনকি গণপিটুনির মতো ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে ঘটে চলেছে। করোনা অতিমারির সংকটকালে এ ধরনের ঘটনা অব্যাহতভাবে ঘটে যাওয়া এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা বৃদ্ধি পাওয়ায় এমএসএফ গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
মতপ্রকাশের অধিকারের লংঘন ও সাংবাদিকতা
এমএসএফ বলছে, বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাপক ব্যবহারে জনমনে নানা উদ্বেগ আর ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এ মামলায় ২ জন সাংবাদিক, ১ জন আইনজীবী ও ৩ জন সাধারণ নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও প্রবাসী কল্যান মন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি করায় ৩ জনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়।
অন্যদিকে, মহেশখালী কলেজের শিক্ষক আবু ছরওয়ার রানার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন’ করায় কক্সবাজারের মহেশখালীর ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম পেশাগত কাজে সচিবালয়ে গেলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবের কক্ষে তাকে আটকে রেখে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয় এবং অফিশিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট আইনে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিষয়ে এমএসএফ বলছে, একটি সভ্য রাষ্ট্রে একজন সাংবাদিকের ওপর এ ধরনের নির্যাতন হতে পারে তা অকল্পনীয়। জামিন পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার এবং অফিশিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের কোনো ধারাই অজামিনযোগ্য নয়, নারী সাংবাদিক ও একটি ছোট শিশুর মা হিসেবে বিশেষ সহানুভূতি তার প্রাপ্য ছিল অথচ সাংবাদিক রোজিনাকে ৫ দিন কারাগারে কাটাতে হয়েছে। একজন নারী সাংবাদিককের ওপরে যে আচরণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক, অন্যায় ও অনভিপ্রেত।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিচার বহির্ভুত হত্যা, বন্দুকযুদ্ধ ও গোলাগুলি:
এমএসএফ তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে রাজধানী ঢাকা, কক্সবাজার ও বান্দরবনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড কথিত ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের ৬টি ঘটনা ঘটেছে। ২টি ঘটনায় কোন হতাহত না হলেও ৪টি ঘটনায় ৫জন নিহত ও ২জন আটক হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতন:
ফরিদপুরে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে থাকা অবস্থায় ১ মে আবুল হোসেন মোল্লাকে (৪৮) ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরশহরের নাচনাপাড়া এলাকায় আনসার ব্যাটালিয়ান ক্যাম্পের সামনে বাসিন্দাদের সঙ্গে আনসার সদস্যদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘটনায় নারীসহ ৯ জন আহত হয়। গাজীপুরের টঙ্গীর মিলগেটে শ্রমিকেরা ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবিতে রাস্তায় নামলে পুলিশ এসে শ্রমিকদের পেটাতে শুরু করে। এতে কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়।
হেফাজতে মৃত্যু
মে মাসে হেফাজতে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শেরপুর, ঢাকা কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার, নওগাঁ ও খাগড়াছড়ি কারাগারে একজন করে কারাবন্দির মৃত্যু হয়েছে।
সীমান্তে হত্যা-নির্যাতন
মে মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাগুলোতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক ১জন অপহরণ ও ২জন বাংলাদেশী নাগরিক গুলিবিদ্দ হয়েছেন।
গনপিটুনি
মে মাসে ৪টি গণপিটুনির ঘটনায় ৩জন নিহত ও ৮জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। প্রচলিত আইনকে উপেক্ষা করে গণপিটুনির ঘটনাকে বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড বলে এমএসএফ মনে করে।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস