জব্দ হচ্ছে পাপুল পরিবারের ৬১৩টি ব্যাংক হিসাব
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ কাজী সহিদ ইসলাম পাপুল এবং তার স্ত্রী সাংসদ সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান এবং মেয়ে ওয়াফা ইসলামের নামের ৬১৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ কাজী সহিদ ইসলাম পাপুল এবং তার স্ত্রী সাংসদ সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান এবং মেয়ে ওয়াফা ইসলামের নামের ৬১৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আদালতের অনুমতি নিয়ে বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের সই করা চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর পাঠানো হয়েছে। কমিশনের জনসংযোগ দপ্তর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে তা ভোগদখলে রাখার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় অভিযোগ এবং প্রায় ১৪৮ কোটি টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে আইনের ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয় এজাহারে।
দুদক সূত্র জানায়, ব্যাংক হিসাবের পাশাপাশি পাপুল, তার স্ত্রী, শ্যালিকা ও মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানের মোট ৩০ দশমিক ২৭ একর জমি এবং গুলশানে একটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব সম্পত্তিও জব্দ তালিকায় যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
ব্যাংক হিসাবগুলোর মধ্যে এনআরবিসি ব্যাংকে ৫৯০টি, প্রাইম ব্যাংকে ১৩টি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে চারটি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে দুটি এবং সিটি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংকে একটি করে হিসাব পাওয়া গেছে।
এর আগে গত ১১ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ কাজী সহিদ ইসলাম পাপুল এবং তার স্ত্রী এমপি সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান এবং মেয়ে ওয়াফা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ১৪৮ কোটি টাকা লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানের আড়ালে জেসমিন প্রধানের পাঁচটি হিসাবের মাধ্যমে ২০১২ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত লন্ডারিং হয় ১৪৮ কোটি টাকা। অথচ মাত্র ২৩ বছর বয়সী জেসমিনে নিজের কোনো আয়ের উৎস নেই।
অন্যদিকে এফডিআর হিসাবের ২ কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকার কোনো উৎস শ্যালিকা জেসমিন দাখিল করতে পারেননি। যে কারণে অবৈধ সম্পদের অভিযোগে কাজী সহিদ ইসলাম পাপুল এবং তার স্ত্রী এমপি সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান এবং মেয়ে ওয়াফা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
চলতি বছরের ৬ জুন এমপি শহীদ ইসলাম পাপুলকে কুয়েতে গ্রেফতার করে সে দেশের পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মানব ও অর্থ পাচার এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েত সরকার। এরপর বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে বাংলাদেশেও তার বিরুদ্ধে প্রথমে মানবপাচার আইনে মামলা করা হয়। এর পাশাপাশি দুদকের পক্ষ থেকে তার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু কথা হয়। চলতি বছরের ১৭ জুন পাপুলের স্ত্রী, শ্যালিকা ও মেয়ের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, ২২ জুন সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত ও ২২ জুলাই জেসমিন ও সেলিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। এছাড়াও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি পাপুল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ২২ ডিসেম্বর মানিলন্ডারিং আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে।